নিজস্ব প্রতিবেদক::সারাদেশে বছরের প্রথম নয় মাসে ১৮২৭ জন শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। যাদের মধ্যে ৪১৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। শারীরিক ও মানসিকভাবে আঘাত প্রাপ্ত হয়েছেন ১৪১১ জন।
এছাড়া রাজনৈতিক সহিংসতা, নির্বাচনী সহিসংতা, সীমান্তে বিএসএফের হামলা, পারিবারিক সহিংসতা, সাংবাদিকদের উপর হামলা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা এবং গণপিটুনির ঘটনাও ঘটেছে। সম্প্রতি মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) ৯ মাসের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।
জানা যায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং এইচআরএসএস এর তথ্য অনুসন্ধানী ইউনিট ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের তথ্যের ভিত্তিতে ২০২৩ সালের ১ম নয় মাসের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এইচআরএসএস এর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর এ নয় মাসে ১৯৫৯ জন নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮২৯ জন, যাদের মধ্যে আশঙ্কাজনকভাবে ৪৭৩ জন (৫৭%) ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু। নারী ও শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৫৬ জন (১৯%) এবং ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩৫ জনকে যাদের মধ্যে শিশু ২১ জন। ৫৯৩ জন নারী ও শিশু যৌন নিপীড়ণের শিকার হয়েছেন তন্মধ্যে শিশু ৩৩২ জন। যৌতুকের জন্য নির্যাতনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫৬ জন নারী এবং শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৫৩ জন ও আত্মহত্যা করেছেন ৬ জন। পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ২৩৮ জন, আহত হয়েছেন ৮৫ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ৯১ জন নারী। এসিড সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৮ জন নারী।
রাজনৈতিক সহিংসতার ৬৮৯টি ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ৬০ জন ও আহত হয়েছেন ৬৭৪৩ জন। যার অধিকাংশই ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের অন্তর্কোন্দল এবং বিএনপির পদযাত্রা ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগের পাল্টা শান্তি সমাবেশ কেন্দ্রিক সংঘর্ষের ঘটনা। তাছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির দ্বারা ৪২১৪ জন রাজনৈতিক গ্রেফতারের শিকার হয়। তন্মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের ৪০৩১ জন। একই সময়ে, বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ২২৩ টি মামলায় ৭৬৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরো ৪৫৮৪৪ জনকে অজ্ঞাত আসামী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। এছাড়া আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের দ্বারা বিরোধাীদলীয় ১৯৯ টি সভা-সমাবেশ আয়োজনে বাধা প্রদানের ঘটনা ঘটেছে। এসময় তাদের সাথে সংঘর্ষে ২৪১৯ জন আহত এবং সমাবেশ কেন্দ্রিক ২৩৩১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও নির্বাচনী সহিংসতার ৪৪টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন ০৪ জন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩৩১ জন ।
গণপিটুনির ৯০ টি ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে নিহত হয়েছেন ৫৭ জন এবং আহত হয়েছেন ৭১ জন।
শ্রমিক নির্যাতনের ১৪২টি ঘটনা ঘটেছে। এতে গাজীপুরের শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলামসহ নিহত হয়েছেন ২৬ জন এবং আহত হয়েছেন ৯৯ জন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং শ্রমিকদের সুরক্ষামূলক সরঞ্জামের অভাবে ১১৫ জন শ্রমিক তাদের কর্মক্ষেত্রে মারা গেছেন।
১৯ টি গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনায় ৭ জন নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক ৩৯ টি হামলার ঘটনায় ১৯ জন বাংলাদেশী নিহত এবং ১৮ জন আহত ও ৭ জন গ্রেফতার হয়েছেন।
১৪০ টি হামলার ঘটনায় ২১৮ জন সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় সন্ত্রাসীদের হামলায় সাংবাদিক গোলাম রব্বানি নাদিম নিহত হয়েছেন। গত নয় মাসে সাংবাদিক আহত হয়েছেন অন্তত ১২১ জন, লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন ৭৭ জন, হুমকির শিকার হয়েছেন ১৪ জন ও গ্রেফতার ৫ জন। একই সময়ে আশঙ্কাজনকভাবে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর অধীনে দায়ের করা ৫৩টি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ৫৫ জন এবং অভিযুক্ত করা হয়েছে ১৪৪ জন।
এছাড়া “সংখ্যালঘু” সম্প্রদায়ের উপর ১৯ টি হামলার ঘটনায় আহত হয়েছেন ২৪ জন এবং ১৪ টি মন্দির, ৩১ টি মূর্তি ও ১১৬ টি বসতবাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। মার্চ মাসে পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় ১ জন নিহত ও অন্তত ৬০ জন আহত হয়েছেন। এ হামলার ঘটনায় কমপক্ষে ১০১টি বাড়ি ও ৩০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
Leave a Reply