টেকনাফ (কক্সবাজার)::কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনার জন্য দেশটির প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের টেকনাফে অবস্থান করছে। তারা প্রথমদিনে ১৮০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎকার ও তথ্য যাচাই বাছাই করছে।
মঙ্গলবার সকাল ৮টায় টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটি দিয়ে কাঠের ট্রলারে করে ৩৪ সদস্যের মিয়ানমার প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ আসে। ট্রলারে ১১ জন মাঝিমাল্লা ছিলেন, যারা সবাই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক।
এ সময় অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) সামছু দৌজাসহ সরকারি কর্মকর্তারা তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এতে মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির রাখাইন প্রাদেশিক সরকারের ইমিগ্রেশন ডিরেক্টর স নাইং। এর আগে, গত ১৫ মার্চ ও ২৫ মে মিয়ানমার প্রতিনিধিদল দুই দফায় বাংলাদেশে আসে। সে সময় প্রায় ৭০০ রোহিঙ্গাদের তথ্য যাচাই বাছাই শেষে মিয়ানমারে ফিরে যায় দলটি। রাখাইনে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ দেখতে ৫ মে বাংলাদেশ সরকার ও রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধিদল রাখাইন সফর করে।
অতিরিক্ত শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) সামছু দৌজা বলেন, সম্ভাব্য প্রত্যাবাসনকে সামনে রেখে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা করতে মিয়ানমারের ৩২ সদস্যের প্রতিনিধিদল ফের বাংলাদেশে এসেছে। তারা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয়।
মঙ্গলবার সকালে বাসে করে লেদা-নয়াপাড়া ক্যাম্পের বসবাসকারী দেড়শ পরিবারের রোহিঙ্গাকে ধাপে ধাপে টেকনাফের নাইট্যংপাড়াস্থল বনবিভাগ ও সড়ক-জনপদ বিভাগের রেস্ট হাউসে আনা হয়। পরে তাদের সঙ্গে একে কথা বলে প্রতিনিধিদল।
মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক অংশ নিতে আসা টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা আমান উল্লাহ বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে আসা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসা হয়েছে। আমার ক্যাম্প থেকে অর্ধশতাধিক লোকজনকে নিয়ে আসা হয়েছে।
তাদের মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠক বসেছে। মূলত মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা বৈঠক অংশ নিতে আসা টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা ছৈয়দ হোসেন বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথা বলতে এখানে এসেছি। আমরা আমাদের দাবিগুলো তুলে ধরেছি।
এ সময় টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আদনান চৌধুরী সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। রোহিঙ্গা শরনার্থী বিষয়ক কমিশনার জানান, মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল টেকনাফে দুই দিন অবস্থান করবেন। এর পর তারা রোহিঙ্গাদের তালিকা যাছাই বাছাই শেষে ২ নভেম্বর মিয়ানমারের উদ্দেশ্য টেকনাফ ত্যাগ করবেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ আট লাখ ৮৮ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর তালিকা মিয়ানমারের কাছে পাঠিয়েছিল। এরপর মিয়ানমারের পক্ষ থেকে ৬৮ হাজার রোহিঙ্গার একটি ফিরতি তালিকা পাঠানো হয়। গত বছর জানুয়ারিতে ওই তালিকা থেকে পরিবারভিত্তিক প্রত্যাবাসনের জন্য প্রাথমিকভাবে ১১৪০ জনকে বাছাই করা হয় পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে।
এর মধ্যে ৭১১ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমার সম্মতি দিলেও বাকি ৪২৯ জনের ব্যাপারে তাদের আপত্তি ছিল। সে সময় ৪২৯ জনের তথ্য যাচাইবাছাই করতেই মিয়ানমারের ১৭ জন সদস্যের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসেছিল।
Leave a Reply