নিজস্ব প্রতিবেদক::পরিকল্পনাবিদ ও সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেছেন, বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ছয়টি স্থানকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এগুলো হল- উপকূলীয় অঞ্চল, বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ অঞ্চল, হাওর এবং আকস্মিক বন্যাপ্রবণ এলাকা, পার্বত্যাঞ্চল ও নগর এলাকা। অঞ্চলভেদে আর্থ-সামাজিক বৈষম্য এবং এর সাধারণ ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানী দারুস সালাম জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ বাস্তবায়নে’ গণমাধ্যমের ভূমিকা শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী।
ড. শামসুল আলম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় শত বছরের ব-দ্বীপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ সরকার। ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ হচ্ছে ১০০ বছরে বাংলাদেশ কোন পর্যায়ে যাবে সেই পরিকল্পনা। ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় বন্যা, নদীভাঙন, নদীশাসন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নগর বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ এখন সবদিক দিয়ে এগিয়ে গেছে উল্লেখ করে ড. শামসুল আলম আরো বলেন, বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ দেশীয় বিশেষজ্ঞদের গাইডলাইনে করা হয়েছে। বিদেশি টিম থাকলেও মূল কাজটি দেশীয় বিশেষজ্ঞরাই করেছেন। জাতীয় প্রয়োজন ও বাস্তবতা অনুযায়ী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
শামসুল আলম বলেন, ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে অতিবন্যা রোধ, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং হতদরিদ্র নির্মূল করা। প্রতিবছর নদী ভাঙ্গনে ৫০ হাজার লোক ঘরবাড়ি হারায়। ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় স্বল্পমেয়াদী ২০৩০ সাল পর্যন্ত এবং মধ্যমেয়াদী ২০৫০ সাল পর্যন্ত কর্মসূচি রয়েছে। মধ্যবর্তী মূল্যায়ন করে বাস্তবতার ভিত্তিতে পরিবর্তন আসতে পারে। এতে ৮০টি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে জিডিপির ১ দশমিক ২ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে। ২০২৫ সালের পর থেকে আড়াই শতাংশ হারে ব্যয় হবে। বাংলাদেশের মোট বিনিয়োগের ৮৭ শতাংশ বেসরকারি খাতে অবদান রয়েছে। সে কারণে এখানে বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি বর্ষাকালে বাংলাদেশে নৌপথের দৈঘ্য হয় ২৪ হাজার কিলোমিটার। আর শুষ্ক মৌসুমে সাড়ে ৬ হাজার কিলোমিটারে নেমে আসে। আমরা যদি এটাকে ধরে রাখতে পারতাম, তাহলে পরিবহন খরচ কমে আসতো।
সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের লক্ষ্য নয়। বন্যার পানির মাধ্যমে পলিমাটি আমাদের জমির উর্বরতা বাড়িয়ে দেয়। বছরে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন টন পলি বহন করে। নদীগুলোর নাব্যতা বৃদ্ধি করে অতিবন্যা নিয়ন্ত্রণ করতে চাই। একই সঙ্গে নদীর প্রকৃত অবস্থায় ফিরিয়ে দিয়ে বিপুল পরিমাণ জমি উদ্ধার করা সম্ভব। যমুনা নদীতে কোথাও কোথাও ১৮ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রস্ততা রয়েছে। এখানে যদি ৬ কিলোমিটারও কমানো যায় তাহলে বিপুল জমি বের হবে।
জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে সেমিনারে আলোচনা করেন জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সুফী জাকির হোসেন, পরিচালক এ, কে, এম আজিজুল হক, পরিচালক ড. মো. মারুফ নাওয়াজ, বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক এবং বাসসের সিনিয়র রিপোর্টার খায়রুজ্জামান কামাল।
সেমিনারটির পরিচালক হিসেবে ইনস্টিটিউটের উপপরিচালক নুসরাত জাবিন এবং সমন্বয়ক হিসেবে সহকারী পরিচালক সাইফুন্নাহার ও সহকারী গ্রন্থাগারিক কাজী ওমর খৈয়াম দায়িত্ব পালন করেন। সেমিনারে বিএসআরএফ’র সদস্যসহ ৬৫ জন গণমাধ্যমকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply