1. dailybanglarkhabor2010@gmail.com : দৈনিক বাংলার খবর : দৈনিক বাংলার খবর
বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ০৬:২৫ অপরাহ্ন

জীবন যুদ্ধে হার না মানা সংগ্রামী নারী জেসমিনের ব্র্যাকের সহযোগিতায় ভাগ্য বদল;

  • প্রকাশিত: রবিবার, ৯ মার্চ, ২০২৫
  • ৬০ বার পড়া হয়েছে

মোঃ জাহিদুল ইসলাম:: জেসমিন। খুলনা শহরের খালিশপুর থানার আলমনগর বস্তির বাসিন্দা। তারা ৪ বোন কোনো ভাই নেই, ৪ বোনের সবার বড় জেসমিন। দৈনিক বাংলার খবর পত্রিকার সঙ্গে আলাপ চারিতায় জেসমিন জানান তাঁদের সৎ মা ছিল। তিনি তাদের ওপরে অনেক অত্যাচার, নির্যাতন করতো। কিন্তু জেসমিনের বাবার কোন জমি জমা না থাকায় অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে দাদির বাড়িতেই থাকতেন বলে জানান তিনি।
জেসমিনের ছোট বেলা কাটে বরগুনা জেলার বেতাগী থানার বকুলতলী গ্রামে। তার বয়স যখন ১০ বছর তখন হঠাৎ একদিন ঝড়-বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে তাদের বাড়ি ঘর নদী গর্ভে চলে যায়। তারা বাবা-মা বোন সবাই মিলে আশ্রয় কেন্দ্রে ১৫ দিনের মতো ছিলেন। যেখানে সরকারি অনুদান ও বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তিদের সহযোগিতায় কোন রকমে খেয়ে পড়ে বেঁচে ছিলো। নিজেদের কোন জমি জমা না থাকায়, বাবার কোন কাজ না থাকায় তার বাবা তাদের নিয়ে বরগুনা থেকে সপরিবারে খুলনায় চলে আসেন। খুলনা এসে বাবা দিন মজুরি কাজ করত এবং মা বাসা বাড়ি কাজ করে আমাদের ৪ বোনের পড়ালেখা খাওয়া-দাওয়ার খরচ চালাতেন। জেসমিনের ১৩ বছর বয়সে ৫ম শ্রেনীতে পড়াকালীন তার বাবা মা বরগুনা জেলার একই গ্রামের মান্নান হাওলাদারের ছেলে মোতালেব হোসেনের সাথে তার বিয়ে দিয়ে দেয়। কিন্তু তার শশুর অসুস্থ ছিল, স্বামী ছিলেন বেকার, স্বামী তেমন কোন কাজ করতেন না। সংসারে অনেক অভাব। একবেলা খেলে আর একবেলা না খেয়ে থাকতো। এরই মধ্যে তার গর্ভে সস্তান আসে। জন্ম নেয় ছেলে সস্তান । কিন্তু বিধিবাম ছেলেটাও ছিল প্রতিবন্ধী। তার দুঃখের কোন সীমা রইল না। শশুর বাড়ির সবাই তাকে প্রতিবন্ধী ছেলে জন্ম দেওয়ার জন্য দায়ী করে অনেক অত্যাচার নির্যাতন চালাতো। সে অসুস্থ্য ছেলেকে রেখে বাসা বাড়িতে কাজ করতে শুরু করে, এর মধ্যেই আসে মহামারী করোনা ভাইরাস। তার বাসা বাড়ির কাজ চলে যায়। তার স্বামী মাঝে মধ্যে দিন মজুরি কাজ করেন। তার সংসার খুব অভাবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। এমন সময় ২০২৩ সালে খালিশপুর শাখার ব্র্যাক আল্ট্রা-পুওর গ্র্যাজুয়েশন কর্মসূচি(সিবিএফ প্রকল্প) থেকে জরিপ করতে আসেন জেসমিনের বাড়িতে। সে জরিপে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়। তার ব্যবসা করার কোন অভিজ্ঞতা ছিল না, কিভাবে ব্যবসার হিসাব রাখতে হয় তাও জানতো না জেসমিন। ব্র্যাকের কাছ থেকে ব্যবসার প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রথমে ২০,০০০ টাকা সুদমুক্ত ঋণ নেয়। সে টাকা দিয়ে খুলনার বড় বাজারের পাইকারী দোকান থেকে শাড়ি কাপড়, থ্রি-পিচ, গজ কাপড় ক্রয় করে ভাড়া বাড়িতে বসে ও বিভিন্ন এলাকায় ফেরি করে কাপড় বিক্রি করতে শুরু করে জেসমিন। তার অনেক ভালো বেচাকেনা হতো লাভের টাকা দিয়ে ব্যবসার মালামাল বাড়াতে থাকে। এরপরে আবার ২য় ঋণ ১০,০০০ টাকা নিয়ে কাপড়ের ব্যবসা সম্প্রসারন করেন। এভাবে ব্যবসা করে লাভের টাকায় তার বেকার স্বামীকে আলমনগর মেইন রোডের পাশে একটি ছোট চা পানের দোকানের ব্যবস্থা করে দেয়। বর্তমানে সে আলমনগর মেইন রোডের সাথে লাগোয়া রেল লাইনের পাশে টিনের ভাঙ্গাচোরা একটি দো-তলা বিল্ডিং এর নিচ তলায় ১টি রুমে ভাড়া নিয়ে বসবাস করছে। ভাড়া বাড়ির ছাদে সে একটি ছোট আকারে মুরগী ও কবুতরের ফার্ম করেছে। ছাদে বস্তা ও টবে সবজি গাছ লাগাচ্ছে। ব্র্যাকের আপারা প্রতিমাসে ৪ বার গ্রুপ ও এন্টারপ্রাইজ ভিজিটের মাধ্যমে তাকে ব্যবসার কারিগরি বিষয় সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন ভাবে ব্যবসার আয়-ব্যয় লাভ ক্ষতি, বাজার যাচাই করে মাল ক্রয়, বাকির হিসাব লিখে রাখা, ক্রেতাদের সাথে ভালো আচরণ করা ইত্যাদি বিষয় সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত ইস্যু, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহার বন্ধ ময়লা আবর্জনা ডাস্টবিনে ফেলা, অতিরিক্ত তাপমাত্রার জন্য ফয়েল ব্যবস্থা, সবজি গাছ লাগানো ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন করেছেন।বর্তমানে এখন সে সঞ্চয় জমা করে এবং আপাদের পরামর্শে ব্যাংকে ১টি একাউন্ট খুলেছেন এবং নিয়মিত টাকা জমা করছেন তিনি। এই টাকা দিয়ে সে একটি জমি ক্রয় করবে এটা তার স্বপ্ন। তার এ সফলতা দেখে তার স্বামীসহ ছেলে অনেক খুশি। সে তাদের সকল আশা আকাংখা পূরন করতে পারছে। ব্র্যাক এবং ব্র্যাকের আপাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ জেসমিন।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত দৈনিক বাংলার খবর
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট