মনির হোসেন, মোংলা:: মোংলা সমুদ্র বন্দর শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌ-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের হাব। এ বন্দরকে ঘিরে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিতে এসেছে আমূল পরিবর্তন। মোংলা বন্দরকে কেন্দ্র করেই এখানে অর্ধশতাধিক শিল্পকারখানা, ইপিজেড এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। এতে মোংলাসহ পার্শ্ববর্তী আরো কয়েকটি উপজেলার অন্তত ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ সমুদ্র বন্দরে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকায় ঘুরে গেছে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের চাকা।
মোংলা বন্দরের বর্তমান চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান দায়িত্বভার গ্রহণের পর বিদেশি জাহাজ আগমন, রিকন্ডিশন্ডন গাড়ি আমদানি, পণ্য হ্যান্ডলিং ও রাজস্ব আয়ে রেকর্ডের পাশাপাশি বিদ্যমান দক্ষতা বৃদ্ধিতে বন্দরে প্রযুক্তিগত আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়েছে। এটি অব্যাহত থাকলে বন্দর আরো এগিয়ে যাবে।
এছাড়াও বন্দরের ইনারবারে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ড্রাফটের গভীরতা (জাহাজের যে অংশ পানির নিচে থাকে) বৃদ্ধি করায় জাহাজ এখন বন্দরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই বার্থিং করতে পারছে। অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি বন্দরকে আরও বেশি গতিশীল করতে চলছে কৌশলগত পুনর্গঠনের কাজ। বর্তমানে মোংলা বন্দরের যেসব উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে সেগুলো বাস্তবায়ন হলে মোংলা বন্দর স্বাভাবিক গতিতেই দক্ষিণ এশিয়ার পাশাপাশি ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলোর সাথে বাণিজ্যিক কানেকটিভিটি তৈরী করতে পারবে। এ বন্দরকে এগিয়ে নিতে সেভাবেই কাজ করছে অন্তর্বতীকালীন সরকারের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।
মোংলা বন্দরের উন্নয়নে চীন সরকারের ঋণ চুক্তির আওতায় যেসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে সেগুলো যেন দ্রুত শুরু করা যায় এ বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করতে সম্প্রতি চীন সফর করেছেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন এবং বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমানসহ নৌমন্ত্রণালয় এবং বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
মোংলা বন্দরের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. মাকরুজ্জামান বলেন, বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম প্রতিবছরেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে বন্দরে বিদেশি জাহাজ নোঙর করেছে ১৩২টি। গাড়ি আমদানি করা হয়েছে ১৬৪৮ ইউনিট। কন্টেইনারে পণ্য আমদানি রপ্তানি হয়েছে ৬ হাজার ৭৬৯ টিইউজ এবং কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের পরিমান ছিল ১৩ লক্ষ ৬০ হাজার মেট্রিকটন।
বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমান সরকারের উদ্যোগ ও বন্দর কর্তৃপক্ষের নানামুখী পরিকল্পনার কারনেই মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি বেড়েছে। বন্দরের এমন সফলতা দেখে আরও বেশি বেশি বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন বিদেশিরা। মোংলা বন্দরে বিদেশি বিনিয়োগ এলে দক্ষিণের অর্থনীতি হবে আরো সম্ভাবনাময়।