আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া।
রোববার যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিনকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রকাশ করেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি দেশের এই সিদ্ধান্ত মূলত মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের আশা পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপ ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের জন্য একটি স্থিতিশীল ও নিরাপদ ভবিষ্যতের প্রত্যাশা প্রকাশ করেছে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে বলেন, “আজ আমরা শান্তির আশা ও দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান পুনরুজ্জীবিত করতে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছি, যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে এটি একটি নিরাপদ ও কার্যকরী ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবেনিস বলেন, কানাডা ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের অংশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। এটি একটি আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার অংশ, যা দুই রাষ্ট্র সমাধানের জন্য সহায়ক হবে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি জানান, “আজ থেকে কানাডা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে এবং ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যত গঠনে অংশীদারিত্বের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি বিশ্ব রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বিশেষ করে গ্লোবাল সেভেন (G7) দেশের মধ্যে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া প্রথম যারা আনুষ্ঠানিকভাবে এ স্বীকৃতি দিয়েছে।
এর আগে জুলাই মাসে স্টারমার জানিয়েছিলেন, যদি ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধবিরতি মেনে না নেয় এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি চুক্তিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না হয়, তবে যুক্তরাজ্য তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবে। গাজার মানবিক পরিস্থিতি এবং ইসরায়েলের চলমান অভিযানের কারণে যুক্তরাজ্যকে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
সরকারি সূত্র বলেছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ ও সহিংসতা ‘অসহনীয়’ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইসরায়েলি স্থল অভিযানে লাখো মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা এই অভিযানকে ‘বিপর্যয়কর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ব্রিটিশ মন্ত্রীরা মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদি শান্তি চুক্তির আশা রক্ষায় এ পদক্ষেপ নেয়ার নৈতিক দায়িত্ব ছিল। পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ, যা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অবৈধ, এই সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা রেখেছে।
তবে এই পদক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা ও বিতর্কও রয়েছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একে ‘সন্ত্রাসকে পুরস্কৃত করা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও ব্রিটিশ উদ্যোগের বিরোধিতা করেছেন। তবে যুক্তরাজ্য স্পষ্ট করেছে, ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র হওয়ার অধিকার হামাসের ওপর নির্ভরশীল নয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় অভিযান শুরু করে। ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৪ হাজার ৯৬৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
বর্তমানে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে আন্তর্জাতিকভাবে ফিলিস্তিনের কোনো সুনির্দিষ্ট সীমানা, রাজধানী বা সেনাবাহিনী নেই। তাই এই স্বীকৃতি মূলত প্রতীকী। দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান অনুযায়ী পশ্চিম তীর ও গাজা নিয়ে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য থাকে।
ব্রিটেনের লেবার পার্টির ভেতরও দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জোরদার হচ্ছিল। স্টারমারের ঘোষণার আগে অর্ধেকের বেশি লেবার এমপি সরকারকে অবিলম্বে সিদ্ধান্ত নিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন।