এম জালাল উদ্দীন:পাইকগাছা:: পাইকগাছায় সুপারির ভরা মৌসুমে জমে উঠেছে হাট-বাজারগুলো। উপজেলার গদাইপুর, আগড়ঘাটা, বাকা, নতুন বাজার, কপিলমুনি,রাড়লী ও আশপাশের এলাকায় প্রতিদিনই সুপারি বিক্রিতে সরগরম হাটগুলো। বাগান মালিক, খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন সুপারি কেনাবেচায়।
এ বছর সুপারির ফলন আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কম হলেও বাজারে চাহিদা ও মূল্য দুই-ই তুলনামূলক ভালো। মৌসুমের শুরুতে প্রতি কুড়ি সুপারি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে দাম কিছুটা কমে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা খুব সাইজগুলো ৪০০ থেকে ৪৫০ নেমে এসেছে।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পাইকগাছা উপজেলায় প্রায় ৪০ হেক্টর জমিতে ৪০ হাজার ৪ শতাধিক সুপারি গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছে গড়ে ২ থেকে ৪ কাঁদি সুপারি ধরে। কোনো কোনো গাছে ফলনের পরিমাণ ৫০ থেকে ১৫০টি, আবার কোনো কোনো গাছে ৫০০ থেকে ৬০০টি পর্যন্ত সুপারি হয়।
লবণাক্ত মাটির এই অঞ্চলে উঁচু ও নিচু বিলান জমির আধিক্য থাকলেও, গদাইপুর, হরিঢালী, কপিলমুনি ও রাড়ুলী ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি সুপারি বাগান রয়েছে। এছাড়া চাঁদখালী ও পৌরসভার কিছু এলাকায়ও সুপারি গাছ দেখা যায়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকরা জানান, হাট থেকে পাইকারি সুপারি সংগ্রহ করে তারা খুলনাসহ বিভিন্ন মোকামে বিক্রি করছেন। কেউ কেউ আবার সুপারি গুদামজাত করে শুকিয়ে বা পানিতে ভিজিয়ে পরবর্তীতে বিক্রির জন্য সংরক্ষণ করছেন।
গদাইপুরের বাগান মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, এ বছর ফলন তেমন ভালো না হলেও বাজারদর ভালো থাকায় মোটামুটি লাভ হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী এম সামাদ জানান,বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম উঠানামা করছে। এক কুড়িতে ২২০টি সুপারি থাকে, যা এলাকায় ৫৫ গোণ্ডা হিসেবে ধরা হয়।
সুপারি শুধু একটি অর্থকরী ফসলই নয়, এটি বাংলাদেশের সংস্কৃতিরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পান খাওয়ার অন্যতম উপাদান এই সুপারি সামাজিক ও ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠানে অপরিহার্য। কেউ খিলি বানিয়ে, কেউবা শুকনা বা মজানো অবস্থায় এটি গ্রহণ করে থাকেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ একরামুল হোসেন বলেন, সুপারি এ অঞ্চলের অর্থকরী ফসলগুলোর একটি। পাইকগাছার সুপারির মানও বেশ ভালো। তবে পুরনো লম্বা গাছগুলো মারা যাওয়া বা কেটে ফেলার কারণে নতুন বাগান তেমন গড়ে উঠছে না। কৃষি অফিস থেকে নতুন করে সুপারি বাগান তৈরিতে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের আশা—যদি সরকারি উদ্যোগে নতুন বাগান সৃষ্টিতে সহায়তা দেওয়া হয়, তবে আগামী বছরগুলোতে পাইকগাছার সুপারি আবারও সুনাম ফিরিয়ে আনবে।