পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি:: বাংলাদেশের অতিপরিচিত প্রান্তিক যাযাবর গোষ্ঠী বেদে — যারা সমাজে সাধারণত বাদিয়া বা বাইদ্যা নামে পরিচিত। বহু শতাব্দী ধরে তারা গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। তাদের পেশার মধ্যে ছিল সাপ খেলা দেখানো, সাপ বিক্রি, গাছের শিকড় ও ভেষজ ওষুধ বিক্রি, তাবিজ-কবচ তৈরি, বানরের খেলা, জাদু খেলা, শিঙ্গা লাগানো, দাঁতের পোকা ফেলা এবং জোঁক ফেলার মাধ্যমে হাতুড়ে চিকিৎসা করা।
শীতের শুরুতে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আবারও বেদে বহরের আগমন ঘটেছে। উপজেলার গদাইপুর খেলার মাঠের পাশে অস্থায়ীভাবে বসতি গড়ে তুলেছে একদল বেদে পরিবার। পলিথিন ও বাঁশের চটা দিয়ে তৈরি ৭-৮টি ছোট ছোট তাবুতে প্রায় ৩০ জন বেদে—পুরুষ, নারী ও শিশু—অবস্থান করছে।
বেদেদের দলনেতা মো. সুমন জানান, তারা যশোরের বারো বাজার এলাকা থেকে এসেছেন। তাদের কারও কারও নিজস্ব জমি ও ঘর থাকলেও, অনেকেই ভিটেহারা। যাদের জমি আছে, তারা বর্ষাকালে বাড়িতে থাকে, আর বাকিরা বছরের বেশিরভাগ সময় দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঐতিহ্যবাহী পেশায় জীবিকা নির্বাহ করে।
তিনি আরও বলেন, “বর্ষা শেষে শীতের শুরু থেকে বর্ষা আসা পর্যন্ত আমরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরি। গাছের শিকড়, তাবিজ-কবচ বিক্রি করি, বানরের খেলা দেখাই, শিঙ্গা লাগানো ও দাঁতের পোকা ফেলার মতো চিকিৎসা দিই। আবার অনেক সময় কারও সোনা-রুপা পুকুর বা জলাশয়ে পড়ে গেলে তা উদ্ধার করে দিই।”
তবে সময়ের পরিবর্তনে বেদেদের ঐতিহ্যবাহী পেশায় আয় রোজগার কমে গেছে। অনেকেই এখন কৃষিকাজ, দিনমজুরি কিংবা ফেরি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। তবুও তারা এখনো ধরে রেখেছে তাদের পুরোনো ঐতিহ্য ও জীবনধারা—ভাসমান তাবুর নিচে, ঘুরে বেড়ানো জীবনেই তাদের সুখ-দুঃখের গল্প লেখা।