নিজস্ব প্রতিবেদক:: মাত্র দুইদিন আগে ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় প্রবল ভূমিকম্পের আতঙ্ক থেকে এখনও বের হতে পারেনি দেশবাসী।
শুক্রবারের সেই ভূমিকম্পের পর তিনবার আফটার শক এসেছে, এবং বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, শঙ্কা এখনও পুরোপুরি কাটেনি। চলতি মাসে আরও কয়েকটি ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের মতে, ছোট ও মাঝারি এই কম্পনগুলো আসলে ভবিষ্যতে বড় মাত্রার ভূমিকম্পের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের কিছু অঞ্চল ঝুঁকিপূর্ণ। তবে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে দেশের কিছু অঞ্চল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের মানচিত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশকে তিনটি ঝুঁকিজোনে ভাগ করা হয়েছে—জোন-১ (উচ্চ ঝুঁকি), জোন-২ (মাঝারি ঝুঁকি) এবং জোন-৩ (নিম্ন ঝুঁকি)।
সাম্প্রতিক গবেষণা ও ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঢাকার চেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চল। উচ্চঝুঁকিপূর্ণ জোন-১ এর অন্তর্ভুক্ত অঞ্চলে রয়েছে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য জেলার কিছু অংশ (রাঙামাটি, বান্দরবান)।
মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ বা জোন-২-এ রয়েছে ঢাকা, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, নোয়াখালী, বগুড়া এবং রাজশাহী বিভাগের অধিকাংশ এলাকা।
সবচেয়ে কম ঝুঁকিপ্রবণ বা জোন-৩-এ রয়েছে দেশের পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। নিম্ন ঝুঁকিপ্রবণ অঞ্চলের জেলাগুলো হলো
খুলনা বিভাগ: খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর।
বরিশাল বিভাগ: বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠি।
রাজশাহী বিভাগের পশ্চিমাংশ: (কিছু অংশ জোন-২-এর হলেও অপেক্ষাকৃত নিরাপদ)।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই অঞ্চলগুলো মূল টেকটোনিক প্লেট বাউন্ডারি থেকে অপেক্ষাকৃত দূরে থাকায় সরাসরি বড় ধরনের কম্পনের উৎস হিসেবে বিবেচিত হয় না। তবে দুর্বল অবকাঠামো বা নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী থাকলে কম মাত্রার ভূমিকম্পেও ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের চারপাশে পাঁচটি প্রধান ভূমিকম্প উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত আছে। প্লেট বাউন্ডারি-১ মিয়ানমার থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত, প্লেট বাউন্ডারি-২ নোয়াখালী থেকে সিলেট পর্যন্ত, এবং প্লেট বাউন্ডারি-৩ সিলেট থেকে ভারতের দিকে বিস্তৃত। এছাড়া ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট এলাকায় ডাউকি ফল্ট এবং মধুপুর ফল্ট রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, দেশের প্রতিটি অঞ্চলে ঝুঁকি রয়েছে, তাই নির্মাণ মান ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।