চিতলমারী প্রতিনিধি:: মামলার ২২ বছর পর আদালতের নির্দেশে প্রতিনিধি দল ঢোল পিটিয়ে এবং লাল কাপড় টানিয়ে বাগেরহাটের চিতলমারী বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ আশরাব আলী মীরের (৬৭) জমি উদ্ধার করে দেন। উদ্ধারের একদিন পর প্রভাবশালীরা ওই জমিতে থাকা ঘরের তালা ভেঙ্গে পূনরায় দখল নিয়েছেন। এ ঘটনার পর আশরাব আলী মীর প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। প্রশাসনের কাছে তিনি এই অন্যায়-অবিচার ও জুলুমের বিচার দাবি করেছেন। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০ টায় উপজেলার চৌদ্দহাজারী গ্রামে এক আত্মীয়র বাড়িতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আশরাব আলী মীর এসব কথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে মোঃ আশরাব আলী মীর বলেন, ‘আমি ২০০০ সালে ১১ জুন চিতলমারী উপজেলার কুরমনি গ্রামের মৃত প্রফুল্ল বড়ালের ছেলে কৃষ্ণ দাস বড়ালের কাছ থেকে ১৩০৬ নং দলিলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ২৪ শতক জমি ক্রয় করি। জমি ক্রয় করে সেখানে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শান্তিতে বসবাস করে আসছিলাম। কিছুদিন পর উপজেলার শিবপুর গ্রামের মৃত মোসলেম আলী শেখের ছেলে প্রভাবশালী মোঃ বাদশা আলম তার লোকজন নিয়ে জোর পূর্বক আমার জায়গা দখল নেয়। ২০০৩ সালে আমি চিতলমারী আদালতে বাদশা আলমসহ ২০ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করি। মামলায় আদালত আমার পক্ষে রায় দেন। ২০০৮ সালে ওরা আপিল করলে বিজ্ঞ আদালতে আপীল না মঞ্জুর করেন। পরবর্তীতে আমি ২০০৯ সালে ৮৪ জনকে বিবাদী করে ৭৪ নং মামলা দায়ের করি। মামলায় আমার পক্ষে রায় হয়। এরপর ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর চুড়ান্ত ডিগ্রীর জন্য আবেদন করে রায় পাই। ২০১৪ সালে ৭ এপ্রিল ও একই সালের একই মাসে ১৩ এপ্রিল ফাইনাল ডিগ্রীর আবেদন করে রায় পাই। ২০২৩ সালে আমি বাদশা আলমসহ সকল বিবাদীদের উচ্ছেদের জন্য মামলা করি। তাতেও আমি রায় পাই। সব প্রক্রিয়া শেষে বিজ্ঞ আদালত ২০২৫ সালের ৩০ নভেম্বর ঢোল পিটিয়ে, লাল কাপড় টানিয়ে ইউএনও, ওসি ও বাজার কমিটির নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে ওই জায়গার উপর নির্মিত সকল ঘরে ৩৬ টি তালা মেরে আমাকে রাতে চাবি বুঝিয়ে দেন। রাতেই আমার ও পরিবারের উপর জীবননাশসহ বিভিন্ন হুমকি-ধামকি আসতে থাকে। ভয়ে আমি গা ঢাকা দিলে প্রভাবশালী মোঃ বাদশা আলম ও তার লোকজন উক্ত ঘর গুলোর তালা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে পূনরায় দখল করে নিয়েছে। ভয়ে এখন আমি জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। যারা আদালতের নির্দেশ অমান্য করতে পারে তাদের কাছে খুন-জখম কোন ব্যাপার নয়। তাই আমি প্রশাসনের কাছে এই অন্যায়-অবিচার ও জুলুমের বিচার চাই।’
মোঃ বাদশা আলম বলেন, ‘আমি ২০০২ সাল থেকে ক্রয় সূত্রে ওই জায়গায় বসবাস করছি। এ যাবৎ কালে কেউ আমার ঘরে তালা মারেনি। তাই তালা ভাঙ্গার প্রশ্ন ওঠে না।’
মোঃ আশরাব আলী মীরের আইনজীবি গোলাম মর্তুজা মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে ৩০ নভেম্বর ঢোল পিটিয়ে আশরাব আলী মীরের জায়াগা ও ঘরের চাবি বুঝে দেওয়া হয়। শুনেছি আদালতকে অমান্য করে প্রভাবশালীরা সেই ঘর ও জায়গা পূনরায় দখল করে নিয়েছে।’
এ ব্যাপারে চিতলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রোকেয়া খানম বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে আমরা ওখানে ফোর্স দিয়েছিলাম। উদ্ধারকৃত ঘর পূনরায় দখলের কোন অভিযোগ কেঊ করেনি। অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে।’