আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এটি পুতিনের প্রথম ভারত সফর। দুই দিনের সফরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভারতের রাজধানীতে পৌঁছেছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে অবতরণ করে রুশ প্রেসিডেন্টকে বহণকারী বিমান। বিমানবন্দরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে স্বাগত জানান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পুতিনের এই সফরের শুরুতেই বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারি বাসভবনে হবে দুই নেতার ব্যক্তিগত নৈশভোজ। এসময় মোদি এবং পুতিন আঞ্চলিক ও বিশ্বের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করার সুযোগ পাবেন। গত বছর প্রধানমন্ত্রী মোদির মস্কো সফরের সময় পুতিনও তাঁকে ব্যক্তিগত ডিনারে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তারই প্রতিদান হিসেবে এই কর্মসূচি রাখা হয়েছে।
পরদিন শুক্রবার সকালে পুতিনকে রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানানো হবে ত্রিপক্ষীয় গার্ড অফ অনার প্রদানের মাধ্যমে। এরপর তিনি রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধির স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানাবেন। আর তারপরই হায়দরাবাদ হাউসে শুরু হবে ২৩তম ভারত-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ সম্মেলন।
প্রধানমন্ত্রী মোদি ও রুশ প্রেসিডেন্টের এই বৈঠকে কোনো বড় ধরনের ঘোষণা বা চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, ও জ্বালানি সহ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলো দুই রাষ্ট্রনেতার আলোচনায় উঠে আসবে বলেই খবর।
সূত্র জানিয়েছে, এই বৈঠকে ভারতীয় কর্মীদের রাশিয়ায় কাজের সুযোগ বাড়াতে বিশেষ চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে। এছাড়াও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার অংশ হিসেবে লজিস্টিক সাপোর্ট চুক্তিও হতে পারে। বাণিজ্য ক্ষেত্রে নতুন সহযোগিতা বিশেষ করে ওষুধ, কৃষি, খাদ্যপণ্য ও ভোক্তা সামগ্রী রপ্তানি বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হবে।
তবে দুই রাষ্ট্রনেতার বৈঠকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে চলেছে প্রতিরক্ষা। আরও উন্নত পর্যায়ের ব্রহ্মোস নিয়ে কথা বলতে পারেন তাঁরা। সেই সঙ্গে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০-এর বাকি দুটি ইউনিট সরবরাহের বিষয়ে স্পষ্টতা চাইবে ভারত।
শুক্রবার মধ্যাহ্নভোজের পর পুতিন অংশ নেবেন ইন্ডিয়া–রাশিয়া বিজনেস ফোরামের অনুষ্ঠানে। এখানে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য পুনরুজ্জীবিত করা নিয়ে আলোচনা হবে। এই পর্যায়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সাম্প্রতিক কয়েক বছরে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক রেকর্ড বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে রুশ প্রেসিডেন্টের এই সফরকে কেন্দ্র করে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলেছে ভারত। এতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্সিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিসের উচ্চ প্রশিক্ষিত কর্মী, ভারতের ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের (এনএসজি) শীর্ষ কমান্ডো, স্নাইপার, ড্রোন, জ্যামার ও এআই পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা রয়েছে।
পুতিনের ব্যস্ত সময়সূচি চলাকালীন তাঁর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগেভাগেই ৫০ জনেরও বেশি রুশ বিশেষ নিরাপত্তাকর্মী দিল্লিতে পৌঁছেছেন। দিল্লি পুলিশ ও এনএসজির কর্মকর্তাদের সঙ্গে পুতিনের গাড়িবহর যেসব পথে চলবে সেসব পথে নিরাপত্তা দায়িত্ব পালন করবেন রুশ নিরাপত্তাকর্মীরা। বিশেষ ড্রোনের সাহায্যে প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার জন্য তৈরি কন্ট্রোল রুম থেকে পুরো গাড়িবহরকে প্রতি মুহূর্তে নজরদারিতে রাখবেন তাঁরা। প্রেসিডেন্ট পুতিনের যাতায়াতের পথজুড়ে মোতায়েন কয়েকজন স্নাইপারও দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়াও জ্যামার, এআই মনিটরিং এবং ফেসিয়াল রিকগনিশন ক্যামেরাসহ আধুনিক প্রযুক্তির বিশাল ব্যবস্থাপনায় সাজানো হয়েছে রুশ প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
নিরাপত্তা সূত্রগুলো জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন দিল্লিতে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাবলয়ের প্রতিটি স্তর সক্রিয় হবে। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রত্যেকটি দল কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ রাখবেন। বাইরের সব নিরাপত্তা স্তরের দায়িত্বে থাকবে এনএসজি ও দিল্লি পুলিশ। আর ভেতরের সব স্তরের দেখভাল করবে রুশ প্রেসিডেন্সিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিস। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে পুতিনের বৈঠকের সময় ভেতরের নিরাপত্তাবলয়ে ভারতের স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপের (এসপিজি) কমান্ডোরাও যুক্ত হবেন।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে বার্ষিক আমদানি প্রায় ৬৫ বিলিয়ন ডলার, আর রাশিয়ার ভারতীয় আমদানি মাত্র ৫ বিলিয়ন ডলার। ফলে বড় বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি হয়েছে। সার খাতে সহযোগিতা বাড়ানোও আলোচনার এজেন্ডায় রয়েছে, কারণ রাশিয়া প্রতি বছর ভারতকে ৩–৪ মিলিয়ন টন সার সরবরাহ করে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি মুর্মু পুতিনের সম্মানে বিশেষ নৈশভোজ আয়োজন করবেন। একই দিনে তিনি ভারতে রুশ রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারক নতুন ভারত চ্যানেল উদ্বোধন করবেন। রুশ প্রেসিডেন্টের সফর প্রায় ২৮ ঘণ্টা চলবে। এদিন রাত ৯টায় তাঁর ভারতে সফরের সমাপ্তি ঘটবে।