আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: সৌদি আরবের পবিত্র নগরী মদিনায় অবস্থিত একাধিক গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প ও ঐতিহাসিক স্থাপনা পরিদর্শন করেছেন প্রিন্সেস সারাহ বিনতে বান্দার বিন আবদুলআজিজ। তিনি আন্তর্জাতিক খেজুর কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এই সফরের মূল লক্ষ্য ছিল সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং কৃষিভিত্তিক উন্নয়নের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় সাধন এবং সেসব উদ্যোগকে উৎসাহ দেওয়া, যা মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও পর্যটন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করতে ভূমিকা রাখে।
সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) জানিয়েছে, প্রিন্সেস সারাহর এই সফর মদিনার টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। বিশেষ করে ঐতিহাসিক নগরী মদিনাকে আধুনিক পর্যটন ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে যে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তার সঙ্গে এই সফরের তাৎপর্য গভীরভাবে জড়িত।
পরিদর্শনকালে প্রিন্সেস সারাহ বলেন, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য কেবল অতীতের স্মৃতি নয়, বরং ভবিষ্যৎ উন্নয়নের একটি শক্ত ভিত্তি। কৃষি, বিশেষ করে খেজুর শিল্প, মদিনার ইতিহাস ও অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এসব খাতকে আধুনিক প্রযুক্তি ও পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এগিয়ে নিলে একদিকে যেমন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে, অন্যদিকে তেমনি স্থানীয় জনগণের জীবনমানও উন্নত হবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, সৌদি ভিশন ২০৩০-এর লক্ষ্য অনুযায়ী দেশের ঐতিহ্যবাহী অঞ্চলগুলোকে আন্তর্জাতিক পর্যটনের জন্য আরও আকর্ষণীয় করে তোলা হচ্ছে। মদিনা তার ধর্মীয় গুরুত্বের পাশাপাশি সংস্কৃতি ও ইতিহাসের দিক থেকেও বিশ্ববাসীর কাছে বিশেষ মর্যাদা বহন করে। তাই এখানে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঐতিহ্য সংরক্ষণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
সফরের অংশ হিসেবে প্রিন্সেস সারাহ মদিনার কেন্দ্রীয় এলাকায়, মসজিদে নববীর দক্ষিণে অবস্থিত আল-সাফিয়া মিউজিয়াম পরিদর্শন করেন। এই জাদুঘরটি বর্তমানে মদিনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও পর্যটন নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত। ঐতিহ্যবাহী উপকরণ ও আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এই মিউজিয়াম দর্শনার্থীদের জন্য একটি ব্যতিক্রমধর্মী অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
আল-সাফিয়া মিউজিয়ামে মদিনার ইতিহাস, ইসলামী সভ্যতা, স্থানীয় সংস্কৃতি এবং প্রাচীন জীবনধারার নানা দিক আধুনিক প্রদর্শনী ও ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। প্রিন্সেস সারাহ মিউজিয়ামের ব্যবস্থাপনা ও প্রদর্শনী পদ্ধতির প্রশংসা করেন এবং বলেন, এই ধরনের উদ্যোগ তরুণ প্রজন্মকে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে নতুনভাবে পরিচিত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
সৌদি প্রেস এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল মদিনায় আগত দেশি-বিদেশি পর্যটকদের অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ করা। ধর্মীয় পর্যটনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যভিত্তিক পর্যটনের সুযোগ বাড়াতে সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে কাজ করছে। প্রিন্সেস সারাহর মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সফর এসব উদ্যোগকে আরও গতিশীল করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পর্যটন বিশেষজ্ঞদের মতে, মদিনার উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যদি পরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তবে এটি শুধু সৌদি আরবের অর্থনীতিতেই নয়, বরং বৈশ্বিক পর্যটন মানচিত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। বিশেষ করে ঐতিহ্যবাহী জাদুঘর, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং কৃষিভিত্তিক পর্যটন কার্যক্রম দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করবে।
প্রিন্সেস সারাহ আন্তর্জাতিক খেজুর কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে খেজুর শিল্পের উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলেছেন। মদিনা অঞ্চল ঐতিহাসিকভাবে খেজুর উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এই শিল্পের আধুনিকায়ন ও টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের আয় বাড়ানোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সৌদি খেজুরের অবস্থান আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্য রয়েছে।
তিনি বলেন, খেজুর শুধু একটি কৃষিপণ্য নয়, এটি সৌদি সংস্কৃতি ও আতিথেয়তার প্রতীক। তাই খেজুরভিত্তিক উদ্যোগগুলোকে সাংস্কৃতিক ও পর্যটন উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত করা হলে বহুমুখী সুফল পাওয়া সম্ভব।
সব মিলিয়ে, প্রিন্সেস সারাহ বিনতে বান্দার বিন আবদুলআজিজের মদিনা সফর ছিল সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও উন্নয়নের মধ্যে সমন্বয় সাধনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। আল-সাফিয়া মিউজিয়ামসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শনের মাধ্যমে তিনি মদিনার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও টেকসই উন্নয়নের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। এই সফর মদিনাকে একটি আধুনিক, সাংস্কৃতিক ও পর্যটনবান্ধব নগরী হিসেবে গড়ে তোলার পথে নতুন গতি সঞ্চার করবে বলে আশা করা হচ্ছে।