বিশেষ প্রতিনিধি:: বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বর্তমানে অত্যন্ত সংকটাপন্ন।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসাধীন ৮০ বছর বয়সী এই বর্ষীয়ান নেত্রীর শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক দল। বর্তমানে তিনি হাসপাতালের সিসিইউতে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস বা ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রয়েছেন।
শনিবার মধ্যরাতের পর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে এক জরুরি ব্রিফিংয়ে বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন জানান, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বা চরম সংকটময়।
তিনি বলেন, তার ফুসফুস ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে বিশ্রাম দেওয়ার জন্য গত ১১ ডিসেম্বর থেকে তাঁকে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রাখা হয়েছে। তাঁর অবস্থার উন্নতি হয়েছে, এমনটি বলার অবকাশ নেই। আমরা এখন আল্লাহর রহমতের দিকে তাকিয়ে আছি।
ডা. জাহিদ আরও জানান, দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি উচ্চপর্যায়ের মেডিকেল বোর্ড সার্বক্ষণিকভাবে তাঁর চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। লন্ডনে অবস্থানরত তাঁর পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমানও ভার্চুয়ালি এই চিকিৎসার তদারকি করছেন।
তারেক রহমান দীর্ঘ ১৭ বছর পর প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফেরার পরপরই মায়ের চিকিৎসার দিকে পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, শনিবার রাতে তারেক রহমান হাসপাতালে মায়ের শয্যাপাশে প্রায় দুই ঘণ্টারও বেশি সময় অতিবাহিত করেন। মধ্যরাতের ঠিক আগে তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করেন। মায়ের বর্তমান শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি অত্যন্ত বিমর্ষ অবস্থায় রয়েছেন এবং দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
গত ২৩ নভেম্বর থেকে বেগম খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, কিডনি জটিলতা এবং ফুসফুসের ইনফেকশনসহ নানা বার্ধক্যজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার দাবি জানানো হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার বর্তমান শারীরিক অবস্থা এতটাই দুর্বল যে এই মুহূর্তে তাঁকে বিমানে করে দেশের বাইরে নেওয়ার মতো ধকল সইবার সক্ষমতা তাঁর নেই। ফলে দেশেই সর্বোচ্চ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাঁর জীবন বাঁচানোর চেষ্টা চলছে।
বেগম খালেদা জিয়ার এই মুমূর্ষু অবস্থার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সারা দেশে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশেষ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় দলীয় কার্যালয়গুলোতে নেতাকর্মীরা ভিড় করছেন। আজ সোমবার তারেক রহমান ঢাকা-১৭ আসনে তার মনোনয়নপত্র জমা দিলেও মায়ের অসুস্থতার কারণে কোনো ধরণের আনন্দ মিছিল বা শোডাউন না করার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে ১১ ডিসেম্বর থেকে তার ভেন্টিলেশন সাপোর্ট অব্যাহত রয়েছে। তাঁর প্রধান শারীরিক সমস্যা হিসেবে ফুসফুস ও কিডনি অকেজো হওয়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বিত বোর্ড তাঁর চিকিৎসা পরিচালনা করছে। তিনি গত ২৩ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং বর্তমানে তাঁর বয়স ৮০ বছর।
বেগম খালেদা জিয়া কেবল একজন রাজনৈতিক নেত্রী নন, বরং তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। তার অসুস্থতা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক বিশাল শূন্যতা তৈরি করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তারেক রহমানের দেশে ফেরা এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার এই মাহেন্দ্রক্ষণে বেগম জিয়ার শারীরিক সংকট দলের নেতাকর্মীদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।
ডা. জাহিদ হোসেন তার বক্তব্যের শেষে বলেন, যদি আল্লাহর অশেষ মেহেরবানি হয় এবং তিনি এই সংকটকালটি পার করতে পারেন, তবেই আমরা ইতিবাচক কোনো খবরের আশা করতে পারি। এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউ ইউনিটের বাইরে এখন কেবলই নিস্তব্ধতা এবং উৎকণ্ঠা। দেশ বিদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর জীবন রক্ষায়। এখন সময়ের অপেক্ষা এবং স্রষ্টার কাছে প্রার্থনাই তাঁর পরিবার ও কোটি কোটি ভক্ত-অনুসারীদের একমাত্র সম্বল।