নিজস্ব প্রতিবেদক:: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। এটি স্থায়ী নয় এবং প্রয়োজনে যেকোনো সময় পুনরায় চালু করা হতে পারে।
সম্প্রতি নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সম্মেলন চলাকালে আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ও জেটিও মিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা মেহেদী হাসানের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতি, নির্বাচন, মানবাধিকার পরিস্থিতি, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, রোহিঙ্গা ইস্যু এবং বৈদেশিক সম্পর্কসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন।
ড. ইউনূস জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত যৌক্তিক। তিনি বলেন, দলটি নিষিদ্ধ করা হয়নি এবং আইনগতভাবে এখনও বৈধ। তবে নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ আসন্ন নির্বাচনে বিশৃঙ্খলার উৎস হতে পারে, এ কারণে সাময়িকভাবে দলটিকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখা হয়েছে।
ড. ইউনূস বলেন, আওয়ামী লীগের সমর্থকরা ভোটার হিসেবে তাদের অধিকার বজায় রাখবেন এবং অন্য যেকোনো প্রার্থীকে ভোট দিতে সক্ষম হবেন।
তিনি ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় আওয়ামী লীগের কোনো অনুশোচনা না থাকার অভিযোগ তুলেছেন। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ওই সময় প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয়।
বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার আন্তর্জাতিক সমালোচনা প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, এটি ভুয়া খবর। দেশে মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক রয়েছে। কখনো কখনো পারিবারিক বা জায়গা সংক্রান্ত বিরোধ ঘটে, তবে পরিকল্পিত বা কাঠামোগত হিন্দু-বিরোধী সহিংসতা চলছে এমনটি সত্য নয়। তিনি ভারতের কিছু মাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচারের অভিযোগও তোলেন।
ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের পাসপোর্টে ‘ইসরায়েল ছাড়া সকল দেশের জন্য বৈধ’ বাক্যটি পুনঃস্থাপন জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন। এটি পূর্বে শেখ হাসিনার আমলে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
গাজায় চলমান সহিংসতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি ভয়াবহ গণহত্যা। শিশুরা মারা যাচ্ছে, মানুষ না খেয়ে আছে এবং বিশ্ববাসী এই দৃশ্য প্রত্যক্ষ করছে, কিন্তু কেউ কিছু করছে না।
ডোনাল্ড ট্রাম্প নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য কিনা— এমন প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, এটি নোবেল কমিটির সিদ্ধান্তের বিষয়।
সাবেক ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) প্রসঙ্গে ড. ইউনূস জানান, তিনি নিরপেক্ষ অবস্থান রাখছেন। সমালোচকরা এনসিপিকে তার মদদপুষ্ট দল হিসেবে দেখলেও তিনি এটি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
Leave a Reply