
নিজস্ব প্রতিবেদক:: সরকারি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পরও নভেম্বর মাসে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলছে না। জাহাজ মালিকরা বলছেন, সরকারি শর্ত, কম যাত্রী এবং নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে তারা এখনই সমুদ্রযাত্রা শুরু করতে রাজি নন।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ নভেম্বর থেকে সেন্টমার্টিনে ভ্রমণ উন্মুক্ত হলেও পর্যটকরা কেবল দিনের বেলাতেই দ্বীপ ঘুরে আসতে পারবেন। রাত্রিযাপনের অনুমতি নেই- এই শর্তই জাহাজ চলাচল না হওয়ার অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর।
তিনি বলেন, ‘দিনে গিয়ে দিনে ফিরতে হয়-এমন যাত্রায় পর্যটকের আগ্রহ থাকে না। কক্সবাজার থেকে যাওয়া-আসায় সময় লাগে ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা, দ্বীপে ঘোরার সময় থাকে মাত্র এক ঘণ্টা। ফলে খরচ তুলতে পারবে না কোনো জাহাজ।
প্রতিদিন মাত্র ১০০ থেকে ১৫০ জন পর্যটক দ্বীপ ভ্রমণে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। অথচ একটি জাহাজ চালাতে হলে অন্তত সাড়ে ৩০০ জন যাত্রী প্রয়োজন।
বাহাদুর বলেন, ‘একবার যাওয়া-আসায় জাহাজের জ্বালানি, টোল, নাবিক, ক্রু, ভ্যাটসহ খরচ হয় প্রায় ১০ লাখ টাকা। এই ভাড়ায় কম যাত্রী নিয়ে চলাচল সম্ভব নয়। কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে যাত্রায় সময় লাগে প্রায় ৭ ঘণ্টা। বিকল্প হিসেবে উখিয়ার ইনানী নৌবাহিনীর জেটি দিয়ে যাত্রা করলে সময় ৫-৬ ঘণ্টায় নেমে আসতে পারে, কিন্তু পরিবেশগত কারণে ওই রুটে অনুমতি নেই।
অন্যদিকে টেকনাফের দমদমিয়া ঘাট থেকেও যাত্রা করা সম্ভব, তবে সেখানে নাফ নদীর নিরাপত্তা পরিস্থিতি বড় বাধা। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত, গুলিবিনিময় ও জেলেদের অপহরণে সেই রুট আপাতত বন্ধই রাখা হয়েছে।
জাহাজ মালিকদের সংগঠন জানিয়েছে, তারা ডিসেম্বর ও জানুয়ারি- এই দুই মাসকে মূল মৌসুম ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তখন রাত্রিযাপন ও পর্যটকের সংখ্যা দুটোই বাড়বে বলে আশা করছে তারা।
হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, ‘গত বছরও ডিসেম্বরেই যাত্রা শুরু হয়েছিল। এবারও একই পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যটক সংখ্যা বাড়লে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই জাহাজ চালু করা যাবে।’
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আ. মান্নান বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু অপারেটররা যাত্রী না পাওয়ায় আপাতত অপেক্ষায় আছে। পর্যটক বাড়লেই তারা রুটে নামবে।
তিনি আরও জানান, টিকিট বিক্রি এখন পুরোপুরি অনলাইনে হচ্ছে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অ্যাপে কিউআর কোডযুক্ত ই-টিকিটই একমাত্র বৈধ। নকল টিকিটে ভ্রমণকারীরা প্রবেশ করতে পারবেন না। গতকাল শনিবার সকালে ফরিদপুর থেকে আগত পর্যটক শামীম খান কক্সবাজারের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরে আসেন।
তিনি বলেন, ‘শুনেছিলাম সেন্টমার্টিন খুলে গেছে, কিন্তু টিকিট নেই, জাহাজও নেই। প্রশাসনের কোনো তৎপরতাও চোখে পড়েনি। অন্যান্য পর্যটকরাও একই ক্ষোভ প্রকাশ করেন- তাদের দাবি, নভেম্বর মাসেও অন্তত এক রাত রাত্রিযাপনের অনুমতি দেয়া হোক।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী নভেম্বরে শুধুমাত্র দিনভ্রমণ অনুমোদিত। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে সীমিত রাত্রিযাপন করা যাবে। প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন। ফেব্রুয়ারি থেকে আবার ৯ মাসের জন্য দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ থাকবে। পরিবেশ রক্ষায় দ্বীপে পলিথিন, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, শব্দ সৃষ্টি, আলো জ্বালানো ও প্রবালক্ষয়ী কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাত্রিযাপন নিষেধাজ্ঞা ও জাহাজ সংকটে নভেম্বরে তাদের কোনো বাণিজ্যিক কার্যক্রমই শুরু হচ্ছে না। ট্যুর অপারেটর রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সেন্টমার্টিন খুলেছে, কিন্তু জাহাজ না চললে পর্যটন মৌসুমও বন্ধই থাকে। সরকার একটু নমনীয় হলে পুরো অঞ্চলের অর্থনীতি সচল হবে।’
Leave a Reply