
নিজস্ব প্রতিবেদক:: ‘খালা, আমি আপনার জামাই হতে চাই’ এই অত্যন্ত সরল অথচ বলিষ্ঠ প্রস্তাবের মধ্য দিয়েই শুরু হয়েছিল আধুনিক বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম চর্চিত দম্পতি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পথচলা।
মঙ্গলবার বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণের পর তার জীবনের এমন নানা অজানা ও আবেগময় স্মৃতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঠে আসছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বেগম খালেদা জিয়ার ডাকনাম ছিল ‘পুতুল’। কলেজে পড়ার সময় থেকেই জিয়াউর রহমান তার নানা ও মামার মুখে পুতুলের সৌন্দর্যের প্রশংসা শুনেছিলেন। নানা-মামারা বলতেন, পুতুলকে দেখলে মনে হয় আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে।
তখন সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন পদে কর্মরত জিয়া ডিএফআই অফিসার হিসেবে দিনাজপুরে পোস্টিং ছিলেন। সেই সুবাদে মাঝেমধ্যেই তিনি খালেদা জিয়াদের বাসায় যেতেন এবং প্রথম দর্শনেই পুতুলের ব্যক্তিত্ব ও সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন।
খালেদা জিয়া ম্যাট্রিক পাস করার পর একদিন জিয়া সরাসরি তাঁর মা বেগম তৈয়বা মজুমদারের কাছে গিয়ে প্রস্তাব দেন, “খালা, আমি আপনার জামাই হতে চাই।”
এমন সরাসরি প্রস্তাবে প্রথমে পরিবারের সবাই অবাক হলেও জিয়ার ব্যক্তিত্ব ও আন্তরিকতায় ধীরে ধীরে সবার সম্মতি মেলে। ১৯৬০ সালের আগস্ট মাসে ঢাকার মুদিপাড়ার বাসায় অত্যন্ত সাদামাটা আয়োজনে তাঁদের আকদ সম্পন্ন হয়। এর এক বছর পর বর্তমান পিজি হাসপাতাল (তৎকালীন শাহবাগ হোটেল)-এ তাঁদের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।
বিয়ের পর ছুটি পেলেই জিয়া স্ত্রীকে নিয়ে আত্মীয়স্বজনের বাসায় বেড়াতে যেতেন। বড় বোন খুরশীদ জাহানের স্মৃতিচারণ অনুযায়ী, জিয়া ছিলেন অত্যন্ত মিশুক ও রসিক। রান্নাঘরে গিয়ে খাবার আবদার করা কিংবা পুতুলকে নিয়ে মজা করা ছিল তার স্বভাবজাত।
১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় তারা পাকিস্তানেই ছিলেন। জিয়া যখন ‘খেমকারান’ রণাঙ্গনে বীরত্ব প্রদর্শন করছিলেন, পুতুল তখন অসীম সাহসে পাকিস্তানে অবস্থান করছিলেন।
বেগম তৈয়বা মজুমদারের ভাষ্য অনুযায়ী, জিয়া ও পুতুল ছিলেন সত্যিকারের এক ‘মধুর দম্পতি’। জীবনের কোনো পর্যায়েই একে অপরের প্রতি তাদের কোনো অভিযোগ ছিল না।
এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পারিবারিক জীবন থেকেই পরিস্থিতির তাগিদে বেগম খালেদা জিয়া ধীরে ধীরে দেশের রাজনীতির শীর্ষবিন্দুতে উঠে আসেন। একটি সাধারণ প্রেমের প্রস্তাব থেকে শুরু হওয়া এই বন্ধন শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতির এক অবিচ্ছেদ্য ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
Leave a Reply