1. dailybanglarkhabor2010@gmail.com : দৈনিক বাংলার খবর : দৈনিক বাংলার খবর
রবিবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৪ পূর্বাহ্ন

চলচ্চিত্রের কমিটি নিয়ে ফারুকীর পরামর্শ

  • প্রকাশিত: বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১৫ বার পড়া হয়েছে

বিনোদন ডেস্ক:: অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের বিভিন্ন খাতে শুরু হয়েছে সংস্কার। তারই অংশ হিসেবে গঠিত হয়েছে চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড, চলচ্চিত্র অনুদান কমিটি, চলচ্চিত্র আমদানি-রপ্তানি কমিটি, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২৩ জুরি বোর্ড ও সর্বশেষ চলচ্চিত্রবিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি। নবগঠিত এসব কমিটি নিয়ে চলচ্চিত্রাঙ্গনে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সামাজিক মাধ্যমে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন নিজেদের মত। চলচ্চিত্রকার মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর মতে সবচেয়ে ভালো হয়েছে চলচ্চিত্রবিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি।

আজ (৯ অক্টোবর) বুধবার সামাজিক মাধ্যমে একটি দীর্ঘ পোস্টে সম্প্রতি গঠিত কমিটিগুলো নিয়ে নিজের পর্যালোচনা তুলে ধরেন ফারুকী। এই নির্মাতা লিখেছেন, ‘চলচ্চিত্রবিষয়ক যতগুলো কমিটি হয়েছে, তার মধ্যে পরামর্শক কমিটিই আমার বিবেচনায় সবচেয়ে ভালো হয়েছে। বাকি কমিটিগুলোতে যোগ্য লোক যেমন আছে, কিছু বিস্ময়কর নামও আছে। এই সমালোচনাটা করে রাখা দরকার, যাতে সরকার বুঝতে পারে। না হলে আগের আমলের মতো ‌“কর্তা যা করেছেন মাইরি” সিচুয়েশন বানিয়ে ফেলব আমরা।’

সেসব কমিটির বিষয়ে পরামর্শ হিসেবে ফারুকী লিখেছেন, ‘আমার বিবেচনায় এখানে আরও কিছু অংশীজন থাকা উচিত ছিল। যেমন ফাহমিদুল হক, বিধান রিবেরু, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, মেজবাউর রহমান সুমন, নুহাশ হুমায়ুন। স্বচ্ছতার জন্য বলে নেওয়া ভালো, আমাকে অনুরোধ করা হয়েছিল পরামর্শক এবং আরেকটা কমিটিতে থাকার জন্য। আমি ব্যক্তিগত কারণে থাকতে চাইনি। এখন যাদের নাম উল্লেখ করলাম, তারা থাকতে অপারগতা জানিয়েছে কি না আমি জানি না।’

পরামর্শক কমিটিতে না থাকলেও কিছু পরামর্শ তুলে ধরে ফারুকী লিখেছেন, ‘আমার বক্তব্য থাকবে—এই পরামর্শক কমিটি থেকে যেসব পরামর্শ যাবে তা যেন অংশীজনরাই তৈরি করে দেন। সরকারি কর্মকর্তাদের কেবল এক্সিকিউশনের দিকটা দেখা উচিত। নীতি প্রণয়নে তারা হাত না দেওয়াই ভালো হবে। কারণ তারা তো আমাদের সমস্যা এবং প্রয়োজনটা জানেন না।’

এ ছাড়া চলচ্চিত্রশিল্পে কার্যকর পরিবর্তন আনতে সিনেমা হলে ই-টিকিটিং ও রেভিনিউ শেয়ার ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন ফারুকী। তিনি লিখেছেন, ‘শিল্পকলা একাডেমির জমি আছে মোটামুটি দেশজুড়েই। কমপক্ষে ৩০ জেলায় শিল্পকলার জায়গায় মাল্টিপ্লেক্স করে সেটা দরপত্রের ভিত্তিতে প্রাইভেট ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। যেহেতু আমাদের জাতিগত দুর্নাম “আমরা শুরু করি, অব্যাহত রাখি না”, সেহেতু এইসব মাল্টিপ্লেক্সকে মনিটরিংয়ে রাখতে হবে এর মেইনটেনেন্স ঠিকঠাক হচ্ছে কি না। না হলে লিজ বাতিলের শর্ত থাকতে হবে। এখন ঝামেলা হলো, শিল্পকলা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন। আর সিনেমা-টিভি-ওটিটি তথ্য ও সম্প্রচারে। এই দুই মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় করে হলেও এটা করা দরকার।’

চলচ্চিত্রে অর্থায়ন ও সহযোগিতা প্রসঙ্গেও পরামর্শ ব্যক্ত করেছেন ফারুকী। তিনি লিখেছেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর একটা হচ্ছে ফিল্ম ফান্ড এবং সাপোর্ট সিস্টেম। আমাদের সামনে বুসান, সানড্যান্স, বার্লিন, রটারডাম, ফিল্মবাজার স্ক্রিন রাইটার্স ল্যাবের উদাহরণ আছে। আমি মনে করি, পরামর্শক কমিটির উচিত অনুদান প্রথায় আমূল পরিবর্তন আনা। ৫০ ভাগ ছবি ফার্স্ট অ্যান্ড সেকেন্ড টাইম ফিল্মমেকারদের জন্য বরাদ্দ থাকা উচিত। এই ৫০ ভাগের মাঝে কমপক্ষে অর্ধেক নারী ফিল্মমেকারদের জন্য থাকা উচিত। তো এই নতুন পরিচালকদের স্রেফ ফান্ড দিয়েই হাত গুটিয়ে ফেলা যাবে না। স্ক্রিন ল্যাবের মতো ইনকিউবেটরে লোকাল এবং ইন্টারন্যাশনাল মেন্টর দিয়ে এদের সহায়তা করতে হবে। পাশাপাশি আমাদের অনুদান পলিসি নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবা উচিত। আমরা কোন ধরনের ছবিকে অনুদান দিব? ইরানের মতো সোশ্যালি রিলেভ্যান্ট এবং ইমপ্যাক্টফুল স্টোরিটোলিং? নাকি কলকাতা আর্টহাউজের দুর্বল ফটোকপি? নাকি বেলা তারের মতো ছবি? আমার বিবেচনা হচ্ছে, আমাদের এখানকার মানুষ, তাদের সম্পর্ক, আবেগ, পাগলামো এসব মিলিয়ে আমাদের আশেপাশে নিজস্ব গল্প এবং চরিত্রেরা হেঁটে বেড়াচ্ছে। এইসব নিয়ে সোশ্যালি রিলেভ্যান্ট ছবির সংখ্যা বাড়লেই আমরা সত্যিকারের বাংলাদেশী নিউ ওয়েভ হতে পারব।’

ইতিহাসনির্ভর চলচ্চিত্র নির্মাণের বিষয়েও পরামর্শ দিয়েছেন ফারুকী। লিখেছেন, ‘লাতিন আমেরিকার স্বৈরশাসন এবং দুঃশাসন আপনি খুঁজে পাবেন তাদের সাহিত্যে-সিনেমায়। আমাদের গত ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদের কাল তুলে ধরার কাজে এই অনুদান কাজে লাগানো যায় কি না দেখতে হবে। তবে আওয়ামী যুগের মতো শ্লোগানসর্বস্ব যেন না হয় খেয়াল রাখতে হবে। একই সাথে পরামর্শক কমিটির উচিত অনুদান কমিটি পুনর্গঠন করা। নতুন পলিসির আলোকে যারা এটা এক্সিকিউট করতে পারবে, তাদের রাখা উচিত। ব্যক্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ।’

কমিটিতে থাকা ব্যক্তিদের প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘এখন যে অনুদান কমিটি করা হয়েছে, সেখানে এক-দুই জন যোগ্য লোক থাকলেও এটা অনেকটাই আওয়ামী লীগ আমলের মতোই ব্যাকডেটেড কমিটি। আর এই কমিটির কে কীভাবে ফ্যাসিবাদের কালচারাল উইংয়ের ফুটসোলজার ছিল, সেই আলাপে গেলাম না। আমি মনে করি, এই কমিটিতে থাকা উচিত ছিল তাদের, যাদের সারা দুনিয়ায় এই কাজগুলো কীভাবে হচ্ছে, সেটার ফার্স্ট হ্যান্ড অভিজ্ঞতা আছে। বিদ্যমান কমিটির যোগ্য দুয়েকজনের পাশাপাশি আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ, নুহাশ হুমায়ুন, আরিফুর রহমান, তানভীর হোসেন, সালেহ সোবহান অনীম, আদনান আল রাজীব, কামার আহমেদ সায়মন, হোমায়রা বিলকিসদের মধ্য থেকে কেউ কেউ থাকলে আমরা একটা ফরওয়ার্ড লুকিং ভিশন পেতাম।’

ব্যক্তির ওপর অনেক কিছু নির্ভর—এমন ভাবনা প্রকাশ করে ফারুকী লিখেছেন, ‘অনেকে ভাবতে পারেন, আমি ব্যক্তির ওপর কেন গুরুত্ব দিচ্ছি। দিচ্ছি, কারণ ব্যক্তির কারণেই আকাশ-পাতাল পার্থক্য রচিত হয়। মোহাম্মদ আযম আর মিডিওকার কোনো রাম-শ্যাম এক জিনিস না। সৈয়দ জামিল আহমেদ আর লাকী এক জিনিস না।’

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত দৈনিক বাংলার খবর
Theme Customized By BreakingNews