নিজস্ব প্রতিনিধি:: যশোর জেলার মণিরামপুর উপজেলার খেদাপাড়া গ্রামের ধনপোতা ঢিবিতে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছর প্রতœতাত্ত্বিক খনন কার্যক্রম শুরু হয়। মঙ্গলবার প্রধান অতিথি হিসেবে খনন কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্না। প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ এর আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার জনগণ অংশগ্রহণ করেন।
প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে এ প্রতœঢিবিটি ২০০৭ সালে চিহ্নিত করা হয়। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর থেকে প্রথম প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও দিকনির্দেশনায় এই প্রতœঢিবিতে উন্নত খনন কার্যক্রম শুরু হয়। বিগত অর্থ বছরে ১১টি বর্গে হ্যারিস ম্যাট্রিক পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রাচীন স্থাপনার ধবংসাবশেষ উন্মোচনসহ খননে প্রাপ্ত প্রতœবস্তু সমূহ নথিভুক্ত করণ করা হয়। গত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে প্রতœ ঢিবির সীমিত একটি অংশে খনন পরিচালনা করে প্রাচীন ইট নির্মিত চতুষ্কোণ প্রার্থনা কক্ষ সমেত একটি বর্গাকার স্থাপনার সন্ধান পাওয়া যায়। উন্মোচিত স্থাপনাটিকে প্রাথমিক ভাবে আদি মধ্যযুগের কোন স্থাপত্য নিদর্শনের বলে ধারণা করা হয়। কোন প্রামাণ্য ঐতিহাসিক উপাদান শিলালিপি, মুদ্রা বা স্মারক নিদর্শন পাওয়া না যাওয়ায় স্থাপত্যকাঠামোর ব্যবহারিক উদ্দেশ্য, প্রকৃতি এমন ধর্মীয় পরিচয় সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। স্থানীয় অধিবাসীদের কাছে এটি পরিচিত ধনপোতা ঢিবি/ বিরাট রাজার ঢিবি /ধনপতি সওদাগরের বাড়ি নামেও পরিচিত। প্রাচীন এই ঢিবিকে কেন্দ্র করে শতশত বছর ধরে এই অঞ্চলে ছড়িয়ে আছে নানা জনশ্রুতি।
নব্বই দশকের পূর্ব পর্যন্ত এই অঞ্চলের প্রাচীনত্ব সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে সংশয় ছিলো। প্রথাগত ঐতিহাসিকদের নিকট বদ্ধমূল ধারণা ছিলো ভূমি গঠন নবীন হওয়ায় এই অঞ্চলে আদি ঐতিহাসিক যুগের প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সাম্প্রতিক প্রতœতাত্ত্বিক আবিষ্কার ও নিদর্শন প্রাপ্তির ঘটনা প্রথাগত ঐতিহাসিকদের প্রচলিত ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে। প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন ও প্রতœসূত্রের ভিত্তিতে যশোরের প্রাচীনত্ব সম্পর্কে আমাদের প্রথম ধারণা প্রদান করেন বরেণ্য প্রতœতত্ত্ববিদ কে এন দীক্ষিত। বিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে বরেণ্য এই প্রতœতত্ত্ববিদ ভরত ভায়না/জটার দেউল বা ভরত রাজার দেউল পরীক্ষামূলক প্রতœতাত্ত্বিক খনন করে ঢিবির নিচে বিলুপ্ত প্রাচীন স্থাপনার অস্তিত্বের কথা প্রথম জানান। কে এন দীক্ষিতের এই প্রতœতাত্ত্বিক আবিষ্কার যশোরের প্রাচীনত্ব ঐতিহাসিকদের দীর্ঘ দিনের প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা পরিবর্তনে সাহায্য করে । এরপর প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে যশোর জেলার মণিরামপুর উপজেলার দমদম পীরস্থান ঢিবি,কেশবপুর উপজেলার গৌড়িঘোনা ইউনিয়নের কাশিমপুর গ্রামে ডালিঝাড়া প্রতœস্থানে খননের ফলে বাংলাদেশের আদি ঐতিহাসিক যুগের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে।এসব প্রতœতাত্ত্বিক ঢিবিতে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রতœতাত্ত্বিক খনন কার্যক্রম পরিচালনার ফলে গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর প্রতœসাক্ষ্যসহ বিভিন্ন ধরণের প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হওয়ার ফলে এই অঞ্চলের প্রাচীনত্ব সম্পর্কে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে।
Leave a Reply