আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: চীনে চলমান রাজনৈতিক ও সামরিক শুদ্ধিকরণের অংশ হিসেবে দেশটির কমিউনিস্ট পার্টি একযোগে নয়জন শীর্ষ জেনারেলকে বরখাস্ত করেছে। শুধু দল থেকে নয়, তাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সেনাবাহিনীর সক্রিয় দায়িত্ব থেকেও। কয়েক দশকের মধ্যে সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরে এটি সবচেয়ে বৃহৎ ও আলোচিত শুদ্ধিকরণ অভিযান।
চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বরখাস্তকৃত এই জেনারেলদের বিরুদ্ধে রয়েছে মারাত্মক আর্থিক অনিয়ম ও দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এটি একদিকে দুর্নীতিবিরোধী প্রচারাভিযান, অন্যদিকে রাজনৈতিক শুদ্ধিকরণের শক্ত বার্তা।
কারা কারা বরখাস্ত হলেন?
সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তি হি ওয়েইডং, যিনি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের পর সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান, তাকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বরখাস্ত হওয়া আরও গুরুত্বপূর্ণ জেনারেলদের মধ্যে আছেন, মিয়াও হুয়া-সিএমসির রাজনৈতিক বিভাগের ডিরেক্টর, হে হংজুন-সিএমসির রাজনৈতিক বিভাগের এক্সিকিউটিভ ডেপুটি ডিরেক্টর, ওয়াং জিউবিন- সিএমসির জয়েন্ট অপারেশন কমান্ড সেন্টারের এক্সিকিউটিভ ডেপুটি ডিরেক্টর, লিন জিয়াংইয়াং- ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডার, কিন শুতং-সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক কমিশনার, ইয়ুআন হুয়াজি-নৌবাহিনীর রাজনৈতিক কমিশনার, ওয়াং হৌবিন-রকেট ফোর্সেস কমান্ডার এবং ওয়াং চুনিং-আর্মড পুলিশ ফোর্স কমান্ডার।
এই নয়জনের মধ্যে অন্তত সাতজন ছিলেন তিন-তারা জেনারেল, এবং সবাই চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যমতে, এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রয়েছে “দলীয় শৃঙ্খলা গুরুতরভাবে লঙ্ঘন এবং দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহ।” এখন তাদের বিরুদ্ধে সেনা আদালতে বিচার চলবে এবং এই শুদ্ধিকরণকে দল ও সেনাবাহিনীর জন্য “একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন” বলা হয়েছে।
চীনা রাজনীতি বিশ্লেষক নেইর থমাস মনে করেন, শি জিনপিংয়ের এই পদক্ষেপ কেবল দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান নয়, বরং নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও কাঠামোগত শুদ্ধতার মাধ্যমে শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা। তিনি বলেন, “এটা পার্টির আত্ম-বিপ্লবের অংশ অযোগ্য বা অবিশ্বস্তদের বাদ দিয়ে একটি দীর্ঘমেয়াদী শাসন কাঠামো নির্মাণের প্রচেষ্টা।”
রকেট ফোর্স, যা চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বহন করে, সেখানেও শীর্ষ কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, গত বছর নিখোঁজ হয়ে যাওয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী কি গ্যাং এবং তার স্থলাভিষিক্ত লিউ জিয়ানচাউ-এর দীর্ঘ অনুপস্থিতিও রাজনৈতিক অস্থিরতার ইঙ্গিত দেয়।
বস্তুত, শুধু সামরিক নয় বেসামরিক প্রশাসনেও একের পর এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শুদ্ধিকরণ চলছে।
২০ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন, যেখানে নতুন সদস্য মনোনয়ন ও নীতি প্রণয়নের আলোচনা হবে। এবার নজর থাকবে কারা থাকছেন আর কারা বাদ পড়ছেন, তার ওপরই।
Leave a Reply