1. dailybanglarkhabor2010@gmail.com : দৈনিক বাংলার খবর : দৈনিক বাংলার খবর
মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০১:০৯ পূর্বাহ্ন

অপতথ্য রোধে ইসির মহাপরিকল্পনা

  • প্রকাশিত: সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫
  • ২০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:: আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ভুয়া তথ্য ও ডিপফেক ঠেকাতে ইসির প্রযুক্তিনির্ভর পরিকল্পনা

২৪ ঘণ্টা সচল কেন্দ্রীয় ‘সেন্ট্রাল সেল’ গঠনের উদ্যোগ

সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে সমন্বিত কাঠামো

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়েছে এক যুগান্তকারী উদ্যোগ— নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-এর অপব্যবহার রোধে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রযুক্তিনির্ভর পরিকল্পনা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া খবর, বিকৃত বক্তব্য, ডিপফেক ভিডিও ও বিভ্রান্তিকর ছবি ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগ বেড়েছে।

নির্বাচনের মতো সংবেদনশীল সময়ে এ ধরনের তথ্যপ্রবাহ জনমত প্রভাবিত করার বড় হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছে ইসি। এই পরিস্থিতিতে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে- ‘অপতথ্য ও গুজব প্রতিরোধে’ গঠন করা হবে একটি কেন্দ্রীয় সেন্ট্রাল সেল, যা সারা দেশে তথ্য পর্যবেক্ষণ, যাচাই ও দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাবে। এই সেল ২৪ ঘণ্টা সচল থাকবে এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে কাজ করবে।

সম্প্রতি আগারগাঁওয়ে ইসির সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘ইন্টিগ্রেশন অব আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইন ন্যাশনাল পার্লামেন্ট ইলেকশন টু কাউন্টার মিসইনফরমেশন অ্যান্ড ডিজইনফরমেশন’ শীর্ষক সেমিনারে এই পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন এনটিএমসি, বিটিআরসি, এমআইএসটি, সিআইডি, আইসিটি বিভাগ, আইএফইএস, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বেসিসসহ সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি এবং প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।

সেমিনার উদ্বোধন করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, এআই-এর অপব্যবহার এখন বৈশ্বিক মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যেন কেউ ভুয়া তথ্য বা বিকৃত ভিডিও ছড়িয়ে জনমত প্রভাবিত করতে না পারে- সেটিই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। তিনি আরও জানান, একটি ২৪ ঘণ্টা সচল ফ্যাক্ট-চেকিং মেকানিজম তৈরি করতে চায় ইসি। এতে নির্দিষ্ট জনবল, সফটওয়্যার, তথ্য যাচাই টুল এবং দায়িত্ব বণ্টনের পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা থাকবে। আমরা কেবল নীতিমালা নয়, বাস্তবায়নযোগ্য উদ্যোগ চাই, বলেন সিইসি।

ইসি সূত্র জানায়, সেন্ট্রাল সেলের কাজ হবে অনলাইনে তথ্য পর্যবেক্ষণ, সন্দেহজনক কনটেন্ট শনাক্ত করা, যাচাই শেষে প্রতিক্রিয়া দেয়া এবং প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলো, যেমন- ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স (টুইটার)-এর সঙ্গেও সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করা হবে, যাতে ভুয়া বা বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট দ্রুত সরানো যায়।

নির্বাচনের সময় বিভ্রান্তিমূলক তথ্য, বিকৃত বক্তব্য বা ডিপফেক কনটেন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফেসবুক বা টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মে কোনো ভিডিও এক ঘণ্টায় কয়েক লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে পারে, যা নির্বাচনের ফলাফলেও পরোক্ষ প্রভাব ফেলতে পারে।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী তারিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এখন প্রায় সবাই সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয়। কেউ ইচ্ছা করলেই এআই ব্যবহার করে ভুয়া ছবি বা ভিডিও বানাতে পারে। নির্বাচনের সময় এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে গুজব ছড়ানো খুব সহজ হবে। তাই ইসির এই উদ্যোগ সময়োপযোগী। তবে শুধু সফটওয়্যার নয়, প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ এবং জনগণের অংশগ্রহণও অত্যন্ত জরুরি।

তিনি পরামর্শ দেন, প্রতিটি অঞ্চলে স্থানীয় তথ্য যাচাই টিম গঠন করা উচিত, যারা দ্রুত গুজব শনাক্ত করে কেন্দ্রীয় সেলে পাঠাবে। ইসির কর্মকর্তারা স্বীকার করছেন, এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ হলো প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও সমন্বয় ঘাটতি। দেশে এখনো পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত প্রযুক্তিকর্মী, উন্নত সফটওয়্যার ও রিয়েল-টাইম তথ্য বিশ্লেষণ ব্যবস্থার অভাব রয়েছে।

ইসির তথ্য ও প্রযুক্তি শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা চাই এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে ভুয়া বা বিকৃত কনটেন্ট শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা যাচাই করে প্রতিক্রিয়া দেয়া যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা করতে হলে বড় পরিসরে মানবসম্পদ ও আধুনিক অবকাঠামো দরকার। আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো জনগণের তথ্য যাচাই সংস্কৃতি তৈরি করা। বাংলাদেশে অধিকাংশ সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী তথ্য যাচাই না করেই শেয়ার করেন, যা অপতথ্য ছড়ানোর অন্যতম কারণ।

ইসি বলছে, এই উদ্যোগ শুধু আসন্ন নির্বাচনের জন্য নয়, বরং একটি দীর্ঘমেয়াদি ‘ইন্টিগ্রেটেড ইনফরমেশন রেসপন্স সিস্টেম’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ চলছে। এর মাধ্যমে মাঠপর্যায়ের প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যমের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ থাকবে। সিইসি বলেন, নির্বাচন শুধু ভোটের দিন নয়, এটি একটি প্রক্রিয়া। জনগণ যেন সত্য ও সঠিক তথ্য পায়, সেটিই আমাদের মূল লক্ষ্য। এজন্য সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের যৌথ প্রচেষ্টা দরকার।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত দৈনিক বাংলার খবর
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট