
নিজস্ব প্রতিবেদক:: আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রিজাইটিং অফিসাররা প্রয়োজনে তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করতে পারবেন, নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেছেন। তবে সে সিদ্ধান্তের পেছনে যৌক্তিক কারণ থাকতে হবে এবং তা দ্রুত কমিশনকে জানাতে হবে।
শনিবার দুপুরে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় “নির্বাচন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের পথ” শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইসি আনোয়ারুল বলেন, আগামী নির্বাচনে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেয়া হবে। প্রিজাইডিং অফিসার যদি মনে করেন কোনো কেন্দ্রে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যা ভোটগ্রহণের সুষ্ঠুতা ব্যাহত করতে পারে, তাহলে তিনি ভোট স্থগিতের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। এ বিষয়ে নতুন করে আরপিওতে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, শুধু প্রিজাইডিং নয়, রিটার্নিং অফিসারও প্রয়োজনে একটি পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা পাবেন, তবে সেটিও যথাযথ কারণ দেখিয়ে করতে হবে। কমিশনার বলেন, ভোটে কারও প্রতি অন্যায় বা পক্ষপাতের সুযোগ আমরা রাখব না। মাঠে যারা দায়িত্ব পালন করবেন, তারা যেন কোনো ধরনের ভয় বা রাজনৈতিক চাপ ছাড়া দায়িত্ব পালন করতে পারেন- এটাই আমাদের লক্ষ্য।
আনোয়ারুল ইসলাম কর্মশালায় উপস্থিত নির্বাচনি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা প্রশাসনের অংশ হয়ে সৎভাবে দায়িত্ব পালন করুন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আপনাদের পাশে থাকবে। সুষ্ঠু ভোট আয়োজনের জন্য যা যা প্রয়োজন, নির্বাচন কমিশন তা নিশ্চিত করবে।
তিনি আরও বলেন, ভোটের দিন অনিয়ম বা সহিংসতা রোধে কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পুলিশ, আনসার, র্যাব ও ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে সমন্বিত টিম থাকবে।
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তারা জানান, মাঠপর্যায়ে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা একযোগে কাজ করলে ভোটের পরিবেশ আরও নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য হবে।
পটুয়াখালীর আট উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের মোট ৬০ জন কর্মকর্তা এই দিনব্যাপী কর্মশালায় অংশ নেন। কর্মশালায় নির্বাচন প্রক্রিয়ার কারিগরি দিক, নিরাপত্তা পরিকল্পনা এবং ভোটগ্রহণ-পরবর্তী ফলাফল প্রেরণ পদ্ধতি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়।
ইসি আনোয়ারুল বলেন, আমরা এমন একটি নির্বাচন চাই, যেখানে সব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে, জনগণ নিরাপদে ভোট দেবে এবং ফলাফল নিয়ে কারও সন্দেহ থাকবে না। তিনি আরও যোগ করেন, নির্বাচন কমিশন কোনো পক্ষের নয়- আমরা শুধু আইনের শাসন ও ভোটারদের অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
কর্মশালার শেষে তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, একটি অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করতে পারলেই আমাদের কাজের সার্থকতা প্রমাণিত হবে।
এই বক্তব্যের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ওপর বিশ্বাস ও কর্তৃত্বের বিকেন্দ্রীকরণে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তাদের মতে, প্রিজাইডিং অফিসারদের হাতে ভোট স্থগিতের ক্ষমতা দেয়া মানে নির্বাচন-দিনের দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ বাড়ানো, যা সুষ্ঠু ভোটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
Leave a Reply