
ফাইল ছবি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :: বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘিরে উদ্বেগ জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
সোমবার রাতে এক্স প্ল্যাটফর্মে দেয়া বার্তায় তিনি খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এবং প্রয়োজনে ভারতের পক্ষ থেকে চিকিৎসা সহায়তা দিতে প্রস্তুত থাকার কথাও উল্লেখ করেন।
মোদি তার পোস্টে লিখেছেন, বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন এবং জনজীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে এসেছেন। তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। প্রয়োজন হলে ভারতের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছি। তার এই অবস্থান বাংলাদেশ ও ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বেগম খালেদা জিয়া কয়েক দশক ধরেই ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, চোখের সমস্যা, ফুসফুসের জটিলতা ও কিডনি রোগসহ নানা দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতায় ভুগছেন। চিকিৎসকেরা দীর্ঘদিন ধরেই তার শারীরিক অবস্থাকে ‘সংবেদনশীল’ হিসেবে উল্লেখ করে আসছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত হয়ে তিনি দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দী ছিলেন। ২০২০ সালে করোনা পরিস্থিতি চলাকালে নির্বাহী আদেশে তার সাজার কার্যকারিতা স্থগিত করে মুক্তি দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ছয় মাস অন্তর আবেদন বিবেচনায় সরকারের মাধ্যমে সেই স্থগিতাদেশ নবায়ন করা হলেও বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি তখন দেয়া হয়নি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর খালেদা জিয়া শর্তহীনভাবে মুক্তি পান। এরপর চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশে লন্ডনে যান তিনি। সেখানে প্রায় চার মাস চিকিৎসা শেষে ৬ মে দেশে ফেরেন।
বাংলাদেশে ফেরার পর থেকেই নিয়মিতভাবে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে তাকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নেয়া হচ্ছিল। সর্বশেষ ২৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখা দিলে তাকে হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, তার শ্বাসকষ্ট, রক্তচাপ ও অঙ্গ–প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতার ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ চলছে।
চিকিৎসার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পাওয়ার বিষয়টি নতুন মাত্রা পেয়েছে সোমবার বিকেলে, যখন চীন থেকে পাঁচজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঢাকায় এসে এভারকেয়ার হাসপাতালে পৌঁছান। বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. আল মামুন গণমাধ্যমকে জানান, এটি একটি প্রাথমিক বিশেষজ্ঞ দল। মূল চিকিৎসক দল আগামীকাল ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
চীনা বিশেষজ্ঞ টিম হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করে খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক পরীক্ষার রিপোর্ট ও চিকিৎসা পরিকল্পনা পর্যালোচনা করবে। তারা সিসিইউতে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার অবস্থা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই বার্তাকে বিশ্লেষকরা কেবল মানবিক আহ্বান নয়, বরং দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের একটি বিশেষ ইঙ্গিত হিসেবেও দেখছেন। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ভারত সরকারের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া তেমন দেখা না গেলেও, খালেদা জিয়ার বিষয়ে মোদির এ মন্তব্যকে নিউ দিল্লির অবস্থানের প্রতিফলন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার ভূমিকা ভারতের দক্ষিণ এশিয়া নীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে বহুদিন। ফলে তার স্বাস্থ্যগত বিষয়ে মোদির উদ্বেগ প্রকাশকে দুই দেশের সম্পর্কের আন্তরিকতার প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা এখনও ‘গুরুতর কিন্তু স্থিতিশীল’। চীনা চিকিৎসক দলের আগমনকে তারা আশাব্যঞ্জক উন্নতি হিসেবে দেখছেন। একই সঙ্গে ভারতের পক্ষ থেকে সহায়তার ইঙ্গিতকে ইতিবাচক কূটনৈতিক সাড়া বলেও মনে করছেন দলটির নেতারা।
খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরাও তার কাছে প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা যায় কি না, তা নিয়ে সর্বোচ্চ সজাগ রয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, চিকিৎসা দলের পরামর্শ পেলে প্রয়োজনে তাকে বিদেশে নেয়ার বিষয়টিও পুনর্বিবেচনা করা হবে।
এভারকেয়ার হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা দমনের পাশাপাশি তার দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর কার্যকারিতা পর্যায়ক্রমে পরীক্ষা করা হচ্ছে। চিকিৎসকদের একটি বিশেষজ্ঞ বোর্ড নিয়মিত বৈঠক করে তার চিকিৎসা পরিকল্পনা হালনাগাদ করছেন।
দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন, বিএনপি সমর্থকসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে খালেদা জিয়ার সুস্থতা নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ ও উদ্বেগ রয়েছে। মোদির বার্তা সেই আলোচনা আরও তীব্র করেছে।
Leave a Reply