
নিজস্ব প্রতিনিধি:: ‘শেয়ারিং লেড রেমেডিয়েশন আউটকামস: এঙ্গেজিং কমিউনিটিজ অ্যান্ড স্টেকহোল্ডারস ফর অ্যালেড-ফ্রি ফিউচার’ শীর্ষক সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান বৃহস্পতিবার খুলনা লবণচরা সোসাইটি অফ সোশ্যাল রিফর্ম (এসএসআর) স্কুল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়।
খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন এস এস আর স্কুলের অধ্যক্ষ সাদিকুজ্জামান, পিওর আর্থের সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ড. গর্ডন কে, বিনখোর্স্ট, খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিস্ট তানভীর হায়দার, স্বাস্থ্য দপ্তরের সহকারী প্রধান মোঃ জোবায়ের হোসেন। সীসা প্রতিকারের ফলাফল শিশু, সম্প্রদায় এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সীসামুক্ত ভবিষ্যৎ নিশ্চিতকরণের ওপর কি-নোট পেপার উপস্থাপন করেন খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মোঃ আতিকুল ইসলাম ও পিওর আর্থের প্রোগ্রাম ম্যানেজার আফতাব উজ জামান। স্বাগত বক্তৃতা করেন পিওর আর্থের কান্ট্রি ডিরেক্টর মিতালী দাস।
অনুষ্ঠানে অতিথিরা বলেন, সুস্থ জীবন-যাপনের জন্য সীসা দূষণ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সীসা দূষণমুক্ত করা শুধু সরকারের কাজ নয়, আমাদের সকলের সচেতনতা প্রয়োজন। আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলে তা হলে আগামী প্রজন্ম এর ক্ষতিকর দিক থেকে রক্ষা পাবো।
বিশ্বব্যাপী সীসা দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ, যেখানে আনুমানিক ৩৬ মিলিয়ন শিশুর (৬০ শতাংশ) রক্তে সীসার মাত্রা ৫ মা.গ্রা/ডে.লি এর ওপরে রেকর্ড করা হয়েছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিত রেফারেন্স সীমার ঊর্ধ্বে। ভোগ্যপণ্যে সীসার অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার এবং ব্যবহৃত সীসা-অ্যাসিড ব্যাটারির অপরিকল্পিত ও অনিরাপদ রিসাইক্লিং সীসা দূষণের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম। পিওর আর্থের টক্সিক সাইট আইডেন্টিফিকেশন প্রোগ্রাম (টিএসআইপি) দেশব্যাপী প্রায় ৩০০টি বিষাক্ত স্থান সনাক্ত করেছে, যার অধিকাংশই সীসা-অ্যাসিড ব্যাটারির অপরিকল্পিত রিসাইক্লিং সাথে সম্পর্কিত। সীসার সংস্পর্শ মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি, বুদ্ধিমত্তা হ্রাস, আচরণগত সমস্যার ঝুঁকি, কিডনি ও হৃদরোগ, গর্ভাবস্থার জটিলতা এবং দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। খুলনার লবনচরার এসএসআর স্কুল এলাকাটি ২০১০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সক্রিয় থাকা একটি অবৈধ সীসা-অ্যাসিড ব্যাটারি গলানোর কার্যক্রমের কারণে মারাত্মকভাবে সীসা দূষণের স্বীকার হয়েছে। ২০২১, ২০২২ এবং ২০২৪ সালে সংগৃহীত মাটি, জল এবং ধূলিকণার নমুনাগুলোতে আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী নিরাপদ সীমার চেয়ে অধিকতর সীসার ঘনত্ব পাওয়া গেছে, যা ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মচারী এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। সীসা দূষিত মাটি পরিশোধনের এই কার্যক্রমে ৯৩৩ ঘনমিটার দূষিত মাটি, ১২০ ঘনমিটার কংক্রিট ও ইটের ধ্বংসাবশেষ, ২১ ঘনমিটার উদ্ভিজ্জ বর্জ্য এবং ১৩ ব্যাগ সেপারেটরসহ ৮৮টি ভাঙা সীসা-ব্যাটারির আবরণ ছিল। পরিশোধিত সব এলাকায় দূষিত মাটি পরিবর্তন করে পরিষ্কার মাটি বা বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রায় তিনশত শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা এবং এলাকার সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এসএসআর স্কুল, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় পিওর আর্থ (চঁৎব ঊধৎঃয) বাংলাদেশ এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে। ফরাসি সরকারের ফ্রেঞ্চ ফ্যাসিলিটিফর গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট (ঋঋঊগ) এর অর্থায়নে ‘ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ফর দ্যা রিডাকশন অব লেড কন্টামিনেশন ইন বাংলাদেশ-এফএফএম প্রজেক্ট’।
Leave a Reply