
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ভারতের জন্য ‘কৌশলগতভাবে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং’ মুহূর্ত বলে অভিহিত করেছে দেশটির কংগ্রেসের পার্লামেন্টারি কমিটি।
শশি থারুরের নেতৃত্বাধীন এই কমিটি সতর্ক করে জানিয়েছে, ভারত যদি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে না পারে, তবে ঢাকাতে নয়াদিল্লির কৌশলগত গুরুত্ব বিলীন হয়ে যেতে পারে।
বৃহস্পতিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, পার্লামেন্টারি কমিটি বাংলাদেশ বিষয়ে ভারত সরকারকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ ও পর্যবেক্ষণ প্রদান করেছে।
কমিটির মতে, বাংলাদেশে ইসলামিক শক্তির উত্থান, চীন ও পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ফলে ভারতের জন্য এক জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, “১৯৭১ সালের চ্যালেঞ্জ ছিল একটি নতুন দেশের জন্ম দেওয়া। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট আরও গুরুতর। কারণ বাংলাদেশের বর্তমান প্রজন্মের চিন্তাধারা আগের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। দেশটির শাসনব্যবস্থা ও রাজনীতির মূল কাঠামো বদলে যাচ্ছে এবং কৌশলগত কারণে তারা ভারত থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে চাইছে।”
ভারত যুদ্ধের কারণে নয়, বরং বাংলাদেশে ‘অপ্রাসঙ্গিক’ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় গুরুত্ব হারাতে পারে বলে কমিটি সতর্ক করেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক পুনর্গঠন এবং চীনের প্রভাব বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। চীন যেভাবে বাংলাদেশে অবকাঠামো, বন্দর উন্নয়ন এবং প্রতিরক্ষা খাতে যুক্ত হচ্ছে, তা ভারতের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবেদনে মোংলা বন্দর সম্প্রসারণ, লালমনিরহাট-১ আসনের সীমান্তবর্তী এলাকা ও পেকুয়ায় সাবমেরিন ঘাঁটির প্রসঙ্গও টানা হয়েছে।
কমিটি আরও দাবি করেছে যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রতিটি স্তরে চীন যুক্ত হচ্ছে, এমনকি জামায়াতে ইসলামীর সাথেও তাদের সখ্যতা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকারকে বাংলাদেশে কোনো বিদেশি শক্তি সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করছে কি না, তা কঠোর নজরদারিতে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে ঢাকাকে অন্য দেশের তুলনায় উন্নয়ন, যোগাযোগ এবং বন্দর ব্যবহারে বেশি সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি। এছাড়া আওয়ামী লীগকে ছাড়া বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্বাচনগুলো কতটা অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে, তা নিয়েও কমিটি প্রশ্ন তুলেছে। তাদের মতে, জামায়াতসহ ইসলামপন্থি দলগুলোর উত্থান এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত থাকা ভারতের জন্য দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত উদ্বেগের বিষয়।
Leave a Reply