বেনাপোল প্রতিনিধি:: বেনাপোল বন্দরে ওজনে কারচুপি বন্ধ হওয়ায় ফল, টমেটোসহ উচ্চ পচনশীল পণ্য আমাদনি বন্ধ হয়ে গেছে। ফল আমদানিকারকরা বেশি সুযোগের আশায় বেনাপোল বন্দর ছেড়ে চলে গেছে ভোমরা বন্দরে। কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর আবারও ফল আমদানি বেড়েছে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে।
ওজনের কারচুপির মাধ্যমে আমদানিকারকরা লাভবান হওয়ার কারণেই বেনাপোল বন্দর ছেড়ে ভোমরা বন্দরে ঝুঁকছেন বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। ফলে একদিকে যেমন সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব, তেমনই লাভবান হচ্ছেন আমদানিকারক ও বন্দরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
আমদানিকারক রাজন আলী বলেন, ‘বেনাপোল স্থলবন্দরে ডিজিটাল ওজন স্কেলে ফল, টমেটো ও মাছসহ অন্যান্য পচনশীল পণ্য ওজন করা হয়ে থাকে। কিন্তু ভোমরা বন্দরে ব্যবহার করা হয় ম্যানুয়াল ওজন স্কেল। সেই ক্ষেত্রে ওজনের একটা বিরাট তারতম্য ঘটানো হচ্ছে এই বন্দরে। ম্যানুয়াল ওজন স্কেলের মাধ্যমে তারা আমদানিকৃত পণ্যের বিরাট অঙ্কের শুল্ক ফাঁকি দিতে সক্ষম হচ্ছে। আর এসব অনৈতিক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত খোদ ভোমরা স্থলবন্দর ও কাস্টমসের কর্মকর্তারা।’
গত ১৫ সেপ্টেম্বর ভারত থেকে আপেল ভর্তি একটি ট্রাক ঢোকে ভোমরা বন্দর দিয়ে। ঢোকার আগে ওপারে আরেক ভারতীয় ট্রাকে মাল লোড করা হয়। এরপর সেই ট্রাক ভোমরা বন্দরে ঢোকে ১৮ সেপ্টেম্বর। ট্রাকে থাকা আপেলের ওজন (ক্যারেটসহ) ছিল ২৮ হাজার ৯২০ কেজি। কিন্তু ভোমরা বন্দরের ওজন স্কেলে মাপা হয় ২৭ হাজার ৮২৮ কেজি। অর্থাৎ, এখানে ওজন কারচুপি হয়েছে ১ হাজার ৯২ কেজি।
বন্দর ব্যবহারকারী মো. রয়েল জানান, চলতি সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় প্রতিদিন ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ৭৫-৮০ ট্রাক পচনশীল পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। অপরদিকে, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে শুধুমাত্র মাছ আসছে।
আমদানিকারকরা ভোমরা বন্দর ব্যবহারের ফলে ট্রাক প্রতি দেড় থেকে দুই টনের বেশি শুল্ক ফাঁকির সুযোগ পাচ্ছেন। সে কারণে তারা এই বন্দর ব্যবহারে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আর সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।
সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী আকতার হোসেন বলেন, ‘চলতি মাসে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ফল আমদানি খুবই কম হয়েছে। সুযোগ-সুবিধা পাওয়ায় বেশির ভাগ আমদানিকারক ভোমরা বন্দর ব্যবহার করছেন। এভাবে চলতে থাকলে বেনাপোল বন্দর দিয়ে যে রাজস্ব আদায়ের সুনাম আছে, তা ম্লান হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে তিনি শুল্ক গোয়েন্দাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ভোমরা স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক রুহুল আমিন বলেন, ‘ইন্ডিয়ান ওজন স্লিপের উপরে আমাদের কোনো ডিপেন্ডেন্সি নাই। আমাদের ওজন স্কেলে যে ওজন হয়, আমরা সেই ওজনই ধরবো। ভোমরা বন্দরে বিন্দুমাত্র কোনো কারচুপি করা হয় না।’
খুলনা কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. আতিকুজ্জামান বলেন, ‘ওজন স্কেলের কারচুপি নিয়ে যে অভিযোগটি উঠেছে এটি সত্য নয়, ভোমরা বন্দরে ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্য বোঝাই ট্রাক সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা, কাস্টমস ও বন্দরের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে শতভাগ পণ্যের ওজন করা হয়। ওজনে কারচুপি করার কোনো সুযোগ নাই।’
Leave a Reply