মার্কিন নির্বাচনের পরবর্তী পর্যায়ে অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটেছে। মার্কিন মুলুকে নয়া রাষ্ট্রপতির আগমনে অনেক সিদ্ধান্ত এসেছে যা সাড়া বিশ্বকে অনেকটা হলে মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। ক্ষমতা গ্রহণের পরবর্তী পর্যায়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ দাতা সংস্থা ইউএসএআইডি-র কার্যক্রম নব্বই দিনের জন্য স্থগিত হয়ে যায় যা পরবর্তীতে বন্ধ হযে যায়। অনেকটা হঠাৎ করে এই কার্যক্রম বন্ধ হবার ফলে অনেক উন্নয়ন কার্যক্রমে স্থবিরতা তৈরী হয় যা ছিল চলমান কার্যক্রমের মধ্যে একটি বাঁধার প্রাচীর তৈরী করা। বাংলাদেশ সহ বিশ্বেও বিভিন্ন পণ্যের প্রতি অতিরিক্ত মাত্রায় শুল্ক প্রয়োগ করা যা এক ধরণের বিস্ময়কর সিদ্ধান্ত।
আমাদের পোশাক শিল্পের জন্য ছিল একটি বড় ধরণের হুমকি। মার্কিন রাষ্ট্রপতির রণে ভঙ্গ দেওয়ার নীতির প্রতি তাঁর বিশ্বাস অনেক প্রবল। বেশ কয়েকদিন অতিবাহিত হবার পর তিনি তার এই শুল্কনীতি থেকে নিজেকে কিছুটা হলে গুটিয়ে আনতে বাধ্য হয়। সীমিত সময়ের জন্য অতিরিক্ত শুল্কনীতি স্থগিত ঘোষণা করে চীনের সাথে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় এক বৈঠকে মিলিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেকটা বাধ্য হয়ে যুক্তরাজ্যের সাথে আলোচনায় যেতে বাধ্য হয়। অতিরিক্ত শুল্কনীতির খেসারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দিতে হয়েছে হাড়ে হাড়ে। পাল্টা শুল্ক প্রযোগের হুমকির মধ্যেও কিন্ত পড়তে হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে। শুল্কনীতি থেকে বেড়িয়ে আসতে না আসতেই অনেকটা হঠাৎ করে যুদ্ধাংদেহি গলায় ইরানের প্রতি জোড়ালোভাবে আওয়াজ দেওয়া শুরু করে। সবচেয়ে দুঃখজনক হলেও সত্য যে অমানবিকতার চরমতম অবস্থানে থাকা ইসরায়লের প্রতি সহানুভুতি দেখানো এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের গাজায় যে বর্বর হামলা হচ্ছে এমন কি ত্রাণমিবিরেও যে হামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করাটা খুবই দুঃখজনক। হাসপাতাল,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোন কিছুই বাদ যায়নি এই হামলা থেকে। ত্রাণ শিবিরে খাদ্য আনতে গিয়ে প্রায় ১ হাজারের বেশী মানুষ নিহত হয়েছে সেটি কি ভাবা যায়।
মার্কিন জনগণ কথা বললেও মার্কিন প্রশাসন ছিল চুপ। বিশ্ব বিবেক কি এখানে চুপ হয়ে যায়। অনেকটা হঠাৎ করে ইসরায়ল ইরানের উপর হামলা করে। লক্ষ্য বস্ত ছিল ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপন। ইসরায়লকে অনেকটা পাল্টা হামলা করতে বাধ্য হয় ইরান। এই হামলার পরবর্তীপর্যায়ে ঘটা করে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করা হবে এবং পরবর্তী পর্যায়ে ইরানের উপর হামলা করা হবে কিন্ত অনেকটা হঠাৎ করে মার্কিন যুদ্ধ বিমান হামলা চালায় ইরানের উপর। ইরান মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন স্থাপনায় আঘাত হানে। ইসরায়লের উপর এই হামলার প্রতিবাদে শুধুমাত্র সৌদি আরব একটি বিবৃতি দিয়ে চুপচাপ বসে থাকে যা খুবই দুঃখজনক। ইরানে মার্কিন হামলার পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম প্রায় ১১০ ডলার বৃদ্ধি পায় ইরান অনেকটা কূটনৈতিক কৌশল হিসাবে হরামুজ প্রণালীর অর্ধেক বন্ধ করে দেয় যা ইরানের সংসদের সম্মানিত আইন প্রণেতারা পাশ করেন। রাশিয়া,ভারত,চীন ,বাংলাদেশ সহ বেশ কিছু দেশ ইরানের প্রতি সমর্থন প্রদর্শন করেন যা ছিল একটি ঐক্যের প্রতীক। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেন রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি পুতিন এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ফোনালাপ ছিল গুরুত্বপূর্ণ। অনেকটা বাধ্য হয়ে রণে ভঙ্গ দেন মার্কিন প্রশাসন। ইরান -ইসরায়ল এর ১২ দিনের যুদ্ধের উত্তেজনার মাথায় রণে ভঙ্গ দিয়ে যুদ্ধ বিরতির ঘোষণা দেন। যুদ্ধ শেষে তিনি আবার অতি মাত্রায় শুল্ক আরোপের দিকে ধাবিত হয়েছেন। রাশিয়ার সাথে কোনো দেশ বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখলে তাদের ওপর ৫০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। ভারতকে অনেকটা কোণটাসা করার লক্ষ্যে চেষ্টার কমতি নেই। ভারত- রাশিযা দ্বিপাক্ষিক বানিজ্য ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে সর্বকালের সর্বোচ্চ ৬৮.৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁচেছে,যা মহামারী পূর্বে ১০.১ বিলিযন ডলারের পরিসংখ্যান থেকে বেশি ভারতের বর্ধিত রপ্তানি এবং রাশিয়ার তেল। ভারত ও চীন পুতিনের ৭০ শতাংশ তেল কেনে । যা রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্র সচল রাখে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র চায়,ভারত বিপুল পরিমাণে মার্কিন পণ্য কিনুক। তেল,গ্যাস, বোয়িং বিমান, হেলিকপ্টার ও পারমাণবিক চুল্লি পর্যন্ত। তারা আরও চায় ভারতের খুচরা বাজারে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধিপাক এবং পুরানো পণ্যের ওপর বিধিনিষেধ শিথিল হোক। চুক্তির শুরুতে ট্রাম্প ও মোদির সরল সমীকরণে কথা বলেছিলেন,যুক্তরাষ্ট্রদেবে পুঁজিনির্ভর পণ্য আর ভারতদেবে শ্রম নির্ভর পণ্য। কিন্ত এখন সেই হিসাব বদলে গেছে বলে মনে হয়। ভারত ইতিমধ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের চেষ্টা করছে। রাশিয়া যাতে ইউক্রেন প্রতি যুদ্ধ করতে না বা বাঁধাগ্রস্ত হয় সেই জন্য রাশিয়ার মিত্র দেশগুলি প্রতি শুল্ক আরোপের চেষ্টা করছে।
ইতিমধ্যে গাজায় যুদ্ধ বিরতির জন্য দৌড় ঝাঁপ শুরু করেছে ট্রাম্প। ট্রাম্প নিজের ঘরে যে সমস্য তৈরী করেছেন সেটি কিন্ত আরও কঠিন হতে চলেছে। ইলান মাস্ক -এর নতুন দল গঠন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প এর বিপক্ষে অবস্থান অনেকটা ভাবিয়ে তুলেছে ট্রাম্প-কে। অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে রাশিয়া আফগান – কে স্বীকৃতি প্রদান মনে ভাবিযে তুলবে আর রাশিয়ার অন্যতম মিত্র রাষ্ট্র ভারত মনে হয় বসে থাকবে না। ইলান মাস্ক এর রাজনীতিতে আবির্ভাব,শুল্ক আরোপের বিপক্ষে অবস্থান হয়ত আগামী দিনের উপমহাদেশের রাজনীতিতে কি হবে সেটি এখন দেখার বিষয়। ইতিমধ্যে ভারতসহ কয়েকটি দেশের সমন্বয়ে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী জোট তৈরী হতে যাচ্ছে খবরটি মার্কিন মুলুকে পৌঁছানো মাত্র মার্কিন রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেছেন যারা এই জোটে থাকবে তাদের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক অতিরিক্ত হিসাবে ধরা হবে। ভারত ইতিমধ্যে মার্কিন পণ্যের উপর পাল্টা শুল্ক আরোপের কথা ভাবছে। এই কথাগুলি লেখার সময় মার্কিন রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন সেখানে তিনি ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা উল্লেখ করেছেন। মার্কিন সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্ব রাজনীতি হযত অনেকটা পরিবর্তন হওয়াটা মনে হয় স্বাভাবিক।
বাপি সাহা, উন্নয়ন কর্মী, মোবাইল ০১৮৩০-১৯৮৫৫০, ইমেইল sahabapi998@gmail.com
Leave a Reply