আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: গাজায় দীর্ঘদিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাস প্রস্তাবিত শান্তি চুক্তির প্রথম ধাপে সম্মত হয়েছে। বুধবার রাতে নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প এই ঘোষণা দেন।
তার প্রকাশিত বার্তায় বলা হয়, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সকল জিম্মি মুক্তি পাবে এবং ইসরায়েল তাদের সেনা বাহিনী নির্ধারিত সীমারেখায় ফিরিয়ে নেবে।
এই ঘোষণা আসে ট্রাম্পের প্রকাশিত ২০ দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, যা গত সপ্তাহে তিনি প্রকাশ করেছিলেন। ইসরায়েল, হামাসসহ বিশ্বের বহু দেশ এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।
এ পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে ৬৭ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। জাতিসংঘের একটি কমিশন এটিকে গণহত্যার পর্যায়ে পড়া অপরাধ বলে আখ্যায়িত করেছে।
ট্রাম্পের বক্তব্য
ট্রাম্প বলেন, “ইসরায়েল ও হামাস উভয়ই আমার শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে স্বাক্ষর করেছে। অচিরেই সব বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং ইসরায়েল তাদের সেনাদের সীমারেখায় ফিরিয়ে নেবে। এটি হবে স্থায়ী শান্তির দিকে আমাদের প্রথম পদক্ষেপ।”
এছাড়া ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, • ইসরায়েল ও হামাস উভয়ই শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে স্বাক্ষর করেছে • সব জিম্মিকে খুব শিগগির মুক্তি দেওয়া হবে • ইসরায়েল তাদের সৈন্যদের নির্ধারিত সীমারেখায় প্রত্যাহার করবে • এটি হবে স্থায়ী ও দৃঢ় শান্তির পথে প্রথম পদক্ষেপ • সব পক্ষকে ন্যায়সঙ্গতভাবে আচরণ করতে হবে
কাতার, মিসর ও তুরস্কের মধ্যস্থতাকারীদেরও ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
তিনি কাতার, মিসর ও তুরস্কের মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
চুক্তি প্রক্রিয়ার পটভূমি
এই ঘোষণা দেওয়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প জানান, তিনি মধ্যপ্রাচ্য সফরের জন্য প্রস্তুত আছেন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি প্রথম এই ২০ দফা পরিকল্পনা প্রকাশ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর কাছ থেকে এক চিঠি গ্রহণের সময়ও ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন যে, শান্তি প্রক্রিয়া এখন বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে।
এখনো যেসব বিষয় অনিশ্চিত
যদিও চুক্তিটি যুদ্ধবিরতির আশা জাগিয়েছে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এর মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের সময়সূচি, গাজায় যুদ্ধ-পরবর্তী প্রশাসনিক কাঠামো, এবং হামাসের ভবিষ্যৎ ভূমিকা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেন, “প্রথম ধাপের কিছু দিক কার্যকর হলেও পুরো চুক্তির বাস্তবায়ন এখনো অনিশ্চিত।”
বন্দিমুক্তি ও সময়সূচি
ফক্স নিউজে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, সোমবারের মধ্যেই জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হতে পারে। হামাস সূত্রে জানা গেছে, ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার অনুমোদনের ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই এই প্রক্রিয়া শুরু হবে।
বর্তমানে হামাসের হাতে অন্তত ২০ জন ইসরায়েলি নাগরিক জীবিত জিম্মি হিসেবে রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেন, “আজ ইসরায়েলের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। আমাদের জিম্মিদের মুক্তিতে সহায়তার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানাই।”
অন্যদিকে হামাস জানায়, চুক্তিতে যুদ্ধবিরতি, ইসরায়েলি বাহিনীর প্রত্যাহার, ত্রাণ প্রবেশ এবং বন্দি বিনিময়ের বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানায়, যাতে ইসরায়েল এই চুক্তির সব শর্ত পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করে।
গাজার জনগণের প্রতিক্রিয়া
গাজা থেকে পাওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতির খবর পেয়ে অনেক পরিবার আনন্দ প্রকাশ করেছে, যদিও এখনও তারা সতর্ক রয়েছে। বছরের পর বছর ধ্বংসযজ্ঞের পর তারা এখন শান্তি ও পুনর্মিলনের আশায় দিন গুনছে।
বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এই অগ্রগতিকে স্বাগত জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্সও একে স্থায়ী শান্তির পথে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে অভিহিত করেছেন।
পরবর্তী ধাপ
নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার বৈঠকে চুক্তিটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদন পেলে সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হবে এবং তিন দিন পর থেকে বন্দি বিনিময় কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
চুক্তির পরবর্তী ধাপে “বোর্ড অব পিস” নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠন করা হবে, যা গাজা প্রশাসনের তদারকি করবে। এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ট্রাম্প, আর সদস্য হিসেবে থাকবেন বিশ্বনেতারা, যার মধ্যে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও রয়েছেন।
Leave a Reply