1. dailybanglarkhabor2010@gmail.com : দৈনিক বাংলার খবর : দৈনিক বাংলার খবর
শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৫৪ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
হংকংয়ের আবাসিক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২৮ বাবা জীবিত থাকার প্রমাণ চাইলেন ইমরান খানের ছোট ছেলে কাসিম খালেদা জিয়ার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়াহ’: সমুদ্রবন্দরগুলোতে ২ নম্বর হুঁশিয়ারি শূন্য হাতে দেশে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরলেন আরও ৩৯ বাংলাদেশি চিতলমারী বাজার ব্যবসায়ী ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন সম্পন্ন পাইকগাছায় ৮ দলীয় শটপিচ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বাগেরহাটে জিয়া মঞ্চের দোয়া মাহফিল মহেশখালীতে কোস্টগার্ডের অভিযানে আগ্নেয়াস্ত্র গোলাবারুদসহ কারিগর আটক মোংলা বন্দরে বিদেশি জাহাজ থেকে পাচার করা কয়লাসহ ১২ চোরাকারবারী আটক

শূন্য হাতে দেশে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরলেন আরও ৩৯ বাংলাদেশি

  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:: যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অভিবাসন নীতির চাপ আরও এক ধাপ বাড়ল বাংলাদেশিদের জন্য। সর্বশেষ শুক্রবার ২৮ নভেম্বর ভোর সাড়ে ৫টার দিকে একটি বিশেষ সামরিক বিমানযোগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে আরও ৩৯ জন বাংলাদেশি নাগরিককে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম তাদের প্রাথমিক সহায়তা, খাদ্য-পানি ও বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করে।

ফেরত আসা ব্যক্তিদের অধিকাংশই পূর্বের মতোই উপকূলীয় ও অভিবাসনপ্রবণ জেলার বাসিন্দা। নোয়াখালী জেলারই ২৬ জন, কুমিল্লা, সিলেট, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর থেকে দুজন করে এবং গাজীপুর, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও নরসিংদী থেকে একজন করে।

এ নিয়ে চলতি বছরে মোট ১৮৭ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠালো যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। ২০২৪ সাল থেকে হিসাব ধরলে এ সংখ্যা ২২০-এরও বেশি।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী ৩৪ জন বৈধভাবে ব্রাজিলে গিয়েছিলেন বিএমইটি ছাড়পত্র নিয়ে। পরে সেখান থেকে নানান দালালের সহায়তায় মেক্সিকো সীমান্ত অতিক্রম করে অবৈধ পথে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকেন। বাকি পাঁচজনের মধ্যে দুজন সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে, আর তিনজন দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছিলেন।

প্রবেশের পর তারা সবাই যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস বা রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন। আইনি প্রক্রিয়া শেষে আদালত বা প্রশাসনিক নির্দেশে তাদের প্রত্যাবাসনের সিদ্ধান্ত হয়।

ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান বলেন, সরকার সম্প্রতি ব্রাজিলে বৈধভাবে কর্মী পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু যারা ব্রাজিল হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন, তাদের উদ্দেশ্য সরকার বা এজেন্সিগুলো যাচাই করেছে কি না—এ বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। তিনি আরও জানান, একজন কর্মীর যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছতে গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়েছে। এই বিপুল অর্থ খরচ করে যারা শেষ পর্যন্ত শূন্য হাতে দেশে ফিরলেন, তার দায় অবশ্যই সংশ্লিষ্ট এজেন্সি ও অনুমোদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্তদের নিতে হবে।

ফেরত আসা যাত্রী ও বিমানবন্দর সূত্র জানায়, এর আগের কয়েক দফায় যুক্তরাষ্ট্র যে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠিয়েছে, তাদের মধ্যে অনেককে হাত-পায়ে শিকল পরিয়ে আনা হয়েছিল। এ ঘটনা দেশে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। কিন্তু এবারের চার্টার্ড ফ্লাইটে শিকল বা অতিরিক্ত নিরাপত্তা ডিভাইস ব্যবহার করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের ডিপোর্টেশন ট্রান্সপোর্ট টিম এবার অপেক্ষাকৃত স্বাভাবিক পদ্ধতিতে যাত্রীদের ফেরত পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।

তবে শিকল না থাকলেও তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা কাটেনি। কেউ কেউ বিপুল ঋণে জর্জরিত, কেউ দালালদের কাছে সর্বস্ব হারিয়েছেন, কেউ আবার পরিবার-সমাজে মানসিক সংকট ও চাপের মুখে পড়বেন।

২০২৫ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি চালু হয়েছে। সীমান্ত টহল জোরদার, আশ্রয় আবেদন গ্রহণে কঠোর নিয়ম, দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য সামরিক ও চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবহার, তৃতীয় বিশ্বের দেশ থেকে অভিবাসন সীমিতকরণ। এই নীতির প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশিসহ বহু দেশের নাগরিকদের ওপর।

মার্কিন অভিবাসন আইন অনুযায়ী বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অবস্থান করলে, আশ্রয় আবেদন বাতিল হলে এবং আদালতের রায়ে ডিপোর্টেশন নিশ্চিত হলে আইস (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস ইনফোর্সমেন্ট) দ্রুত প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করে। অতীতে সাধারণ যাত্রীবাহী বিমানে ফেরত পাঠানো হলেও এখন সামরিক ও চার্টার্ড বিমান ব্যবহারের হার দ্রুত বাড়ছে। এতে যাত্রীদের নিজ দেশে ফেরার প্রক্রিয়া আরও দ্রুততর হয়েছে।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশিদের এভাবে গ্রেপ্তার ও ফেরত পাঠানোর পেছনে বড় ভূমিকা রয়েছে দালালচক্র, ভুয়া এজেন্সি, এবং অনিয়ন্ত্রিত বিদেশগমন প্রক্রিয়ার। তারা বলেন, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন রুটকে মানবপাচারকারীরা সহজ ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে। ইউএস-মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে স্বপ্নের আমেরিকা পৌঁছাতে গিয়ে হাজারো মানুষ নিপীড়ন, অর্থচুরি, এমনকি প্রাণহানির ঝুঁকিতে পড়ছে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি ছাড়া এই চক্র বন্ধ করা কঠিন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশে ফেরার পর তাদের অনেকেই হিমশিম খাচ্ছেন মানসিক আঘাত, পরিবারের দায় ও ঋণের কারণে। তাই সরকারের পাশাপাশি এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত পুনর্বাসন, কাউন্সেলিং এবং কর্মসংস্থান সহায়ক প্রোগ্রাম প্রয়োজন।

অবৈধ পথে যাত্রা নয়, নিরাপদ অভিবাসনই সমাধান। যদি বাংলাদেশি কর্মীরা যথাযথ গাইডলাইন, নিরাপদ চ্যানেল এবং বৈধ অভিবাসন ব্যবস্থার প্রতি আস্থা পান, তাহলে অবৈধ পথে ভয়ংকর ঝুঁকি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রমুখী যাত্রা অনেকটাই কমে আসবে বলে অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত দৈনিক বাংলার খবর
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট