1. dailybanglarkhabor2010@gmail.com : দৈনিক বাংলার খবর : দৈনিক বাংলার খবর
মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৫৬ অপরাহ্ন

তানজিদের ফিফটির রেকর্ড, রিশাদের ঘূর্ণিঝড়, দাপুটে বাংলাদেশের জয়

  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ৪ বার পড়া হয়েছে

স্পোর্টস ডেস্ক:: বাংলাদেশ আবার প্রমাণ করল, সঠিক সময়ে ছন্দে ফিরতে জানে এই দল। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে ১৩.৪ ওভারে মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে ১১৮ রান তুলে সহজ জয় নিশ্চিত করে টাইগাররা। এই জয়ের মাধ্যমে সিরিজও নিজেদের করে নেয় ২-১ ব্যবধানে।

কিন্তু জয়ের চেয়েও বড় আলোচনার জায়গা হয়ে উঠলেন তানজিদ হাসান তামিম। ব্যাটে আধিপত্য, হাতে বিশ্ব রেকর্ড এক ম্যাচেই দুই দিকেই নিজের সামর্থ্যের পূর্ণ ঝলক দেখালেন এ তরুণ।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে আয়ারল্যান্ড শুরু থেকেই চাপে। তিন ওভারের মধ্যে তিন উইকেট পড়ে দলটি এমন ঘূর্ণিপাকে পড়ে যে আর ঘুরে দাঁড়ানোই সম্ভব হয়নি।

রিশাদ হোসেন তাঁর ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা স্পেল উপহার দেন-৪ ওভারে মাত্র ২১ রান দিয়ে ৩ উইকেট। তার গুগলি, লেগব্রেক, আর ধারাবাহিক ভ্যারিয়েশন আয়ারল্যান্ডের টপ অর্ডারকে ভেঙে দেয়।
অন্যদিকে শরীফুল ইসলামের গতি ও লেন্থ ব্যাটারদের বিভ্রান্ত করে তোলে। তিনি তুলে নেন ২ উইকেট।
তবে শেষ ধাক্কা দেন মোস্তাফিজ। বিশেষ করে ১৮তম ওভারে তাঁর জোড়া আঘাতে নিশ্চিত হয়ে যায় আয়ারল্যান্ড বড় সংগ্রহ করতে পারবে না। কাটার স্লোয়ারে সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত ছিলেন ব্যাটাররা।

পুরো ইনিংসে আয়ারল্যান্ড তুলে মাত্র ১১৭ রান, যেখানে একমাত্র প্রতিরোধ হিসেবে দেখা যায় পল স্টার্লিংয়ের ৩৮ রানের ইনিংস। বাকিরা ছিলেন সম্পূর্ণ নড়বড়ে, কখনো স্পিনে আটকে, কখনো কাটারে প্রতারিত, আবার কখনো ফিল্ডার তানজিদের হাতে ধরা পড়ে।

টি-টোয়েন্টিতে ফিল্ডারের সর্বোচ্চ ক্যাচ সাধারণত ৩ বা ৪ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু আজ তানজিদ হাসান যেন বলের সঙ্গে অদ্ভুত টান তৈরি করেছিলেন। তিনি ৫টি ক্যাচ ধরেন, যা পূর্ণ সদস্য দেশের কোনো আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ক্যাচের নতুন রেকর্ড।

ফিল্ডিং–পজিশন বদল হলেও তাঁর ধারায় কমতি ছিল না-ডিপ, শর্ট, স্কয়ার-সব জায়গায় বল যেন তাঁকেই খুঁজে নিয়েছে। দলের সতীর্থদের হাস্যরসের মধ্যেও তানজিদের এই অবদান ম্যাচের গতিপথ বদলে দেয়।

১১৮ রানের সহজ লক্ষ্য হলেও শুরুটা তেমন সুখকর ছিল না বাংলাদেশের। প্রথমে সাইফ হাসান (১৯) ফেরেন দলের রান ৩০ হতে না হতেই। এরপর লিটন দাসও (৫) আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন। দুই ওপেনারের বিদায়ে খানিকটা চাপ তৈরি হয়, কারণ আগের ম্যাচগুলোতে পাওয়ারপ্লেতে বাংলাদেশ খুব স্বচ্ছন্দ ছিল না। কিন্তু সেখান থেকেই ম্যাচের দায়িত্ব নেন তানজিদ পারভেজ জুটি।

স্পিনারদের বিপক্ষে রোটেশন বজায় রেখে স্ট্রাইক রেট ধরে রাখেন এই ফিফটি তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ১১তম, তবে গুরুত্বের বিচারে অন্যতম সেরা।

পারভেজ হোসেনের ব্যাটিং ছিল শান্ত, হিসেবী এবং ঝুঁকিবর্জিত। তানজিদ আক্রমণাত্মক থাকায় তিনি শুধু স্ট্রাইক রোটেট করে দলকে জয়ের পথেই রেখেছেন। ম্যাচের চাপ যখন শেষের দিকে নামমাত্রই, তখন তিনি কয়েকটি সুন্দর ব্যাট স্ট্রোক খেলে ইনিংস শেষ করেন।

১৩.৪ ওভারেই লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলা বাংলাদেশের ব্যাটিং ইউনিটের আত্মবিশ্বাসের বড় প্রতিফলন।

এই ম্যাচ শুধু একটি সিরিজ জয় নয় এটি আগামী আন্তর্জাতিক সিরিজগুলোর আগে একটি মানসিক শক্তিবৃদ্ধিও।

বাংলাদেশ নকআউট ধাঁচের স্থিরতা দেখিয়েছে। বড় রান না হলেও ছোট লক্ষ্যকে দ্রুত ও ধরে–ধরে তাড়া করা-এটাই দেখায় দল কতটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। স্পিন পেসের নিখুঁত সমন্বয়ে আয়ারল্যান্ডকে আটকে দেওয়া হয়েছে।

তানজিদের ৫ ক্যাচ তো ইতিহাসই হয়ে গেল। বাকি সুযোগগুলোও বাংলাদেশ নষ্ট করেনি। এমন ধারাবাহিক ফিল্ডিং সচরাচর দেখা যায় না এই দলে—আজ ছিল ব্যতিক্রমী দিন।

টেক্টরের ‘অদ্ভুত’ বোল্ড হওয়া: ব্যাট ছুঁয়ে বল ধীরে গড়িয়ে স্টাম্পে লেগে আউট—এমন অস্বাভাবিক দৃশ্য আয়ারল্যান্ডের ব্যাটিংকে আরও চাপে ঠেলে দেয়।

রিশাদের টানা উইকেট: তাঁর গুগলিতে মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যানদের হালচাল হারিয়ে ফেলতে দেখা যায়।

মোস্তাফিজের ১৮তম ওভারের জোড়া শিকার: ইনিংসের টার্নিং পয়েন্ট, যেখানে আয়ারল্যান্ডের ১৩০+ রানের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়।

সিরিজ জয়ের মাধ্যমে লম্বা সময়ের টি-টোয়েন্টি খরা কাটল।
নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটারদের ওপর আস্থা আরও দৃঢ় হলো: বিশেষ করে তানজিদ, রিশাদ, পারভেজ প্রমাণ করলেন তাঁরা ম্যাচফিনিশার হিসেবে প্রস্তুত।
দলের ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং তিন বিভাগই একই দিনে সেরা ফর্মে দেখা গেছে যা খুব কম ঘটে।

তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ কেবল জিতেনি খেলার সব বিভাগে নিজেদের আধিপত্য প্রমাণ করেছে।

তানজিদের রেকর্ড, রিশাদের ঘূর্ণি, পারভেজের ঠান্ডা মাথার ইনিংস এবং কাটার মাস্টারের অভিজ্ঞতা সব মিলিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ দলীয় পারফরম্যান্স। সিরিজ জয়ের মাধ্যমে দল এখন নতুন উদ্যম ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে সামনের চ্যালেঞ্জের অপেক্ষায়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত দৈনিক বাংলার খবর
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট