
বাগেরহাট প্রতিনিধি:: বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার শুভদিয়া গ্রামে তাস খেলাকে কেন্দ্র করে বড় ভাইয়ের লাঠির আঘাতে ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। নিহতের নাম রিপন মন্ডল (৩০)। তিনি মেঘনাথ মন্ডলের ছেলে এবং পেশায় ভ্যানচালক ছিলেন।
স্থানীয় সূত্র ও এলাকাবাসী জানান, গত শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে শুভদিয়া গ্রামের অনিন্দ্যর দোকানে তাস খেলার সময় রিপন মন্ডলের সঙ্গে তার বড় ভাই প্রহ্লাদ মন্ডলের তীব্র বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে বড় ভাই প্রহ্লাদ মন্ডল লাঠি দিয়ে রিপনের মাথায় আঘাত করলে তিনি ঘটনাস্থলেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এরপর আর তার জ্ঞান ফেরেনি।
ঘটনার সময় শংকর, তরুণ মালি ও শুকমার ডালিসহ কয়েকজন উপস্থিত থাকলেও ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত বড় ভাই প্রহ্লাদ মন্ডল এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
গুরুতর আহত অবস্থায় রিপন মন্ডলকে প্রথমে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে ছয় দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে তিনি মারা যান।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঘটনার প্রকৃত সত্য আড়াল করতে শুরু থেকেই নিহতের পরিবার ভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আসছে। বড় ছেলেকে রক্ষা করতে ঘটনাটিকে ‘ভ্যান দুর্ঘটনা’ হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এমনকি ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ দ্রুত দাহ করার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি জানাজানি হলে পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শ্মশানে দাহ করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, রিপন মন্ডল লাঠির আঘাতেই মারা গেছেন—এ কথা এলাকাবাসী জানলেও প্রভাবশালী মহলের ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না।
এ বিষয়ে শুভদিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এম এ আওয়াল শেখ বলেন, আনুমানিক ৫ থেকে ৭ দিন আগে বড় ভাইয়ের লাঠির আঘাতে ছোট ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে বলে একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র থেকে আমি জানতে পেরেছি। অনিন্দ্যর দোকানে তাস খেলাকে কেন্দ্র করেই প্রহ্লাদ মন্ডল তার ছোট ভাই রিপনের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। এলাকাবাসীর ধারণা, ওই আঘাতের ফলেই রিপনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু একটি প্রভাবশালী মহল পরিকল্পিতভাবে ঘটনাটিকে ভ্যান দুর্ঘটনা হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, অভিযুক্ত প্রহ্লাদ মন্ডল এলাকার কিছু প্রভাবশালী ও কথিত অপরাধীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে চলাফেরা করেন। বিশেষ করে শুভদিয়া গ্রামের কামরুল ওরফে ‘ছোট বুড়ো’ নামে পরিচিত এক ব্যক্তির সঙ্গে তার ওঠাবসা রয়েছে। এসব প্রভাবশালীর সহযোগিতায় ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চলছে।
রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা বাজারের চিকিৎসক ডা. মোঃ ওবায়দুল্লাহ গাজী বলেন,গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর রিপন মন্ডল গুরুতর মাথায় আঘাত নিয়ে আমার কাছে আসেন। তার সঙ্গে থাকা লোকজন ভ্যান দুর্ঘটনার কথা বললেও রোগীর অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দ্রুত তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। রোগী প্রচণ্ড ব্যথায় চিৎকার করছিল, তবে তার মুখ থেকে সরাসরি দুর্ঘটনার কথা আমি শুনিনি।
ফকিরহাট মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ সাইফুল ইসলাম বলেন,মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে আমি ও আমাদের সার্কেল অফিসার শুভদিয়া গ্রামে নিহতের বাড়িতে যাই। নিহতের মা ও বড় ভাবি আমাদের জানান, রিপন ভ্যান দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মারা গেছেন। তবে স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, দুই ভাইয়ের বিরোধের একপর্যায়ে বড় ভাই প্রহ্লাদ মন্ডল শাসন করতে গিয়ে লাঠি দিয়ে রিপনের মাথায় আঘাত করেন।
তিনি আরও বলেন,পরিবারের সদস্যরা এখনো মামলা করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তবে তারা চাইলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে থানাকে জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। সচেতন মহল দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত, দোষীদের গ্রেপ্তার এবং ঘটনার প্রকৃত সত্য উদঘাটনের দাবি জানিয়েছেন। এদিকে রিপনের মৃত্যুর পর থেকে অভিযুক্ত বড় ভাই প্রহ্লাদ মন্ডল পলাতক রয়েছেন। এছাড়া নিহত রিপন মন্ডলের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে পরিবারের কেউই এখন পর্যন্ত স্পষ্ট বা সঠিক তথ্য প্রকাশ করেননি। বরং শুরু থেকেই তারা বিষয়টি আড়াল করে ভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আসছেন। পরিবারের এই নীরবতা ও অস্পষ্ট অবস্থান ঘটনার রহস্য আরও ঘনীভূত করেছে এবং নিরপেক্ষ তদন্ত ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
Leave a Reply