অরুণ দেবনাথ, ডুমুরিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি:: ডুমুরিয়ায় ফিল্মি স্টাইলে আপন সহোদরের একটি দোকান ঘর দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে স্বপন হালদারের বিরুদ্ধে। গত ৬ আগস্ট বিএনপি নেতাকর্মী সমর্থিত এশটি গ্রুপের সহায়তায় তিনি ঘরটি দখল করে নিয়েছেন। দু’মাস তালাবদ্ধ ছিলো ঘরটি। পরবর্তিতে বাজার কমিটি বিষয়টি মিমাংশের দায়িত্ব নিয়েছিলো। কিন্তু তার আগেই মোটা অংকের চুক্তিতে গত বৃহস্পতিবার সকালে ঘর দখলের অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, উপজেলার রঘুনাথপুর বাজারে একটি পাকা দোকান ঘর নিয়ে দীর্ঘ এক যুগ ধরে বিরোধ চলে আসছে হালদার বংসের আপন সহোদরের মধ্যে। তবে জায়গাটি রঘুনাথপুর বাজারের সরকারি সম্পত্তি। পিতার জীবদ্দশা হতে অদ্যবদি পর্যন্ত “হালদার ফার্মেসি” নামক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছে ওই সম্পত্তির উপর। পিতার মৃত্যুর পূর্বে প্রথম পুত্র দেশ ত্যাগ করেন। এরপর বাকি তিনপুত্র ফার্সেসী পরিচালনা করতে থাকেন। একটা সময় ব্যবসার মূল দায়িত্ব থাকা মেজ ভাই স্বপন হালদার অর্থনৈতিকভাবে অনেক দায়-দেনা হয়ে পড়েন। পরবর্তিতে দেনাগ্রস্থ স্বপনের ঋণ পরিশোধ করে সহোদর কমল হালদার ও উত্তম হালদার। এনিয়ে ২০১৪ সালে কয়েক দফা শালিশী বৈঠক বসে। তৎকালীন শালিশী বোর্ডের আহবায়ক ছিলেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খান শাকুর উদ্দিন। শালিশী বোর্ডের সদস্য ছিলেন আন্দুলিয়ার সাত্তার আকুঞ্জী, রঘুনাথপুরের এ.এম হুমায়ুন কবির, দূর্গাপদ সাহা, চন্ডীদাস দেওয়ান, ডাঃ হরিদাস মন্ডল ও দেড়–লীর প্রদীপ কুমার সাহা(মৃত)। তবে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ওই শালিশিবোর্ডের সদস্যগণ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক সদস্য জানায়, শালিশে কেউ স্বপন হালদারকে তাহার পৈত্রিক সম্পত্তি হতে বঞ্চিত না করার পক্ষেও মত দেন। আবার কেউ বিপক্ষেও ছিলেন।
এ বিষয়ে উত্তম হালদার জানায়, আ’লীগ সরকার পতনের পর ৬ আগস্ট বিকালে আমার দোকানে তালা দিয়ে বন্ধ করে দেন দুষ্কৃতিকারীরা। পরদিন বাজার কমিটির লোকজন এসে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয় এবং বিরোধপূর্ণ ঘরটি মিমাংশা না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে জানায়। কিন্তু বৃহস্পতিবার মোটা অংকের চুক্তিতে ২০/২৫জন লোক এসে সেই বিরোধপূর্ণ ঘরটি তালা খুলে তাকে (স্বপন) বসিয়ে দিয়ে গেছে।
ঘটনার প্রেক্ষিতে স্বপন কুমার হালদার জানান, বিগত দিনে যে শালিশী বৈঠক হয়েছে সেখানে তারা কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি। আমি আমার ঘরে উঠেছি। পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে আমাকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করে আসছে দীর্ঘদিন। রঘুনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চন্দন স্টোর নামক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চলমান অর্থবছরে ড্রেট লাইসেন্স রয়েছে তাদের।
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা মোঃ ওমর আলী আকুঞ্জি জানান, কমল ও উত্তম তার আপন সহোদর স্বপন হালদারকে পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার পায়তারা করছে দীর্ঘদিন ধরে। বিগত ১৪/১৫ বছর যাবত জুলুম অত্যাচার করে আসছে। উত্তম তার আপন ভাইপোকে বেধড়ক মারপিট করেছে কিছুদিন আগে। তাকে হাসপাতালে একবার দেখতেও যায়নি। তাই মানবিক কারণে আমরা স্বপন হালদারকে তার দোকানে উঠিয়ে দিয়েছি।
রঘুনাথপুর বাজার কমিটির সভাপতি এএম আমিনুর রহমান জানান, গত ৬ আগস্ট পরিস্থিতি খুবই উত্তাল ছিলো। এসময়ে ওই ঘরটি বন্ধ করে দেয় বিক্ষুপ্তকারীরা। তাই স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ঘরটি বন্ধ রাখতে বলা হয়। তবে সামনের মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বসাবসির কথা ছিলো। কিন্তু তার আগেই বিতর্কিত ঘরটি দখল করে নিয়েছে।
এ বিষয়ে রঘুনাথপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ এসআই শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার বাজারে আপন ভাই-ভাইদের মধ্যে দোকান ঘর দখলের ঘটনা শুনেছি। তবে এনিয়ে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি।
Leave a Reply