অরুণ দেবনাথ ,খুলনা প্রতিনিধি:: খুলনার ডুমুরিয়ায় কয়েক শত জেলে পরিবার নানান প্রতিকূলতার মধ্যে সংগ্রাম করে বেঁচে আছে। মুক্ত জলাশয়, বিলে খালে মাছের অভাবে ব্যবসায় মন্দার মধ্যে দিয়ে চলছে তাদের দিন। জেলেরা মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে এখন তারা ঋণের জালে বন্দী হয়ে পড়েছে। অভাবে জর্জরিত অধিকাংশ জেলে পরিবার নিদারুণ কষ্টে চলছে তাদের দিন। সরেজমিনে দেখা ও জানা যায়, জেলেপল্লীতে বসবাসরত বেশীরভাগ জেলেই অশিক্ষিত। অনেকের পরিবারও বেশ বড়। কথা হয় বরাতিয়া জেলে পল্লীর শুভংকারের সাথে তিনি জানায়, এক সময় খাল-বিলে পানি ছিল, মাছও পাওয়া যেত প্রচুর। তখন মুক্ত জলাশয়ে মাছ শিকার করেই ৭ সদস্যের পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করে এসেছি এখন প্রত্যেক সদস্য কাজ করেও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে । কালের আবর্তে তাদের মাছ ধরা পেশায় ভাটা পড়েছে। কারণ অধিকাংশ নদীতে পানি নেই, মাছও নেই আগের মত। বিলে এখন ধান চাষ হয়। অনেক বিত্তশালী নিজেদের নীচু জমিতে গভীর পুকুর কেটে মাছ চাষ শুরু করেছে।
সাধন কুমার জানান সংসার চালাতে দীর্ঘদিন ধরেই তাদের হিমসিম খেতে হচ্ছে। বাচ্চাদের লেখাপড়ার চিন্তা মাথায় আসার আগেই অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসার জন্য এনজিও ঋণ নিতে হয়। সাপ্তাহিক কিস্তির টাকা যোগাড় করতেই তাদের হিমসিম খেতে হচ্ছে। দিনে দিনে দায়দেনা বেড়েই চলেছে । তারপরও বেড়েছে একশ্রেনির ভুমিদস্যুদের অত্যাচার । নানা অজুহাতে আমাদের বাপদাদাদের আমল থেকে নৌকা রাখার জায়গা টুকু নানা অজুহাতে ভুয়া ডিসিআর কেটে নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেই। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বরাতিয়া গ্রামের জেলে পল্লীতে প্রায় ১০০ টি পরিবার বসবাস করে। ঘরের সাথে ঘর ঠাসা, কোনমতে বসবাস করা যায়। বরাতিয়ার জেলে পল্লীর একাধিক জেলে জানান ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজে ছেলেমেয়ে নিয়ে এভাবে সংসার করছি। অভাবের তাড়নায় আজকাল ভ্যান চালনা, কামলা খাটাসহ অন্য পেশায় জীবিকা নির্বাহ করছে। জেলেপল্লীর ছেলে-বুড়ো নিজেদের জাত ব্যবসা ধরে রাখার চেষ্টা করলেও নানান প্রতিকূলতায় টিকে থাকতে পারছে না।অপরদিকে বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে কারেন্ট জালের বিস্তর ব্যবহার। জেলে সম্প্রদায় ছাড়াও মাছ ব্যবসায় বড় বড় মহাজন, এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের বিত্তশালীরা ঝুঁকে পড়েছে মাছ ধরায়।স্থানীয় প্রভাবশালী ও মাছ আড়তদারদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জেলেদের দৈনন্দিন জীবন-জীবিকা।
ডুমুরিয়া উপজেলার নদী- খালে ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে। বেশীর ভাগ জেলে পল্লীর জায়গা সংকটে ঝুপড়ি ঘর বস্তির আকার ধারণ করেছে। নেই স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। নিকটে স্কুল থাকা সত্ত্বেও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করানোর সামর্থ নেই তাদের। পূজা-পার্বণ ও অন্যান্য ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ তাদের একেবারেই নিষ্প্রাণ। সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটাতে হিমসিম খেতে হয় প্রতিনিয়ত। এভাবেই চলে ঋনগ্রস্ত জেলেপল্লীর অধিকাংশ মানুষের জীবন ব্যবস্থা।
Leave a Reply