পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি:: বর্ষা এলেই গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় হওয়ায় খুলনার পাইকগাছায় নার্সারিতে গাছের চারার চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এবছরও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বর্ষা মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন নার্সারিতে চারার বেচাকেনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন নার্সারি মালিক ও শ্রমিকরা।
উপজেলার গদাইপুর এলাকায় গড়ে উঠেছে প্রায় তিন শতাধিক বাণিজ্যিক নার্সারি। এছাড়া ছোট-বড় আরও প্রায় দুই শতাধিক নার্সারি গড়ে উঠেছে ১০ শতক থেকে এক বিঘা জমির উপর। গদাইপুর যেন এখন সবুজের গ্রাম। বাড়ির সামনে, পেছনে ও আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নার্সারিতে সাজানো রয়েছে নানা প্রজাতির ফুল, ফল, মসলা ও বনজ গাছের চারা।
বর্ষা মৌসুমে চারা রোপণের সাফল্য বেশি হওয়ায় এই সময়কে ঘিরে নার্সারিগুলোতে বেড়ে যায় বিক্রির চাপ। স্থানীয় নার্সারি মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, কেবল বর্ষা মৌসুমেই গদাইপুর এলাকার নার্সারিগুলোতে প্রায় ১০০ কোটি টাকার চারা বিক্রি হয়। আর সারা বছর ধরে এই পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২৫০ কোটি টাকার বেশি।
এলাকার নার্সারিগুলোতে দেশীয় প্রজাতির পাশাপাশি বিদেশি ফলের চারারও উৎপাদন হচ্ছে। স্ট্রবেরি, রাম্বুটান, ড্রাগন, থাই পেয়ারা ইত্যাদি ৩০-৪০ প্রজাতির বিদেশি ফলের চারা তৈরি করে পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে—চট্টগ্রাম, রংপুর, দিনাজপুর, সিলেট, বরিশাল, রাজশাহী ও কুমিল্লাসহ নানা জেলায়। এছাড়া চুই, দারুচিনি, তেজপাতা, গোলমরিচ, এলাচ, লবঙ্গসহ মসলাজাতীয় চারারও রয়েছে ব্যাপক উৎপাদন ও বিক্রি।
নার্সারিগুলোর কর্মচাঞ্চল্যও চোখে পড়ে। কেউ আগাছা পরিষ্কার করছেন, কেউ পানি দিচ্ছেন, আবার কেউ ভ্যান, ট্রাক বা পিকআপে করে চারার চালান দিচ্ছেন। এসব চারার বেশিরভাগই পলি ব্যাগে রোপণ করা, যা পরিবহনে সুবিধাজনক।
এ বিষয়ে পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. একরামুল হোসেন বলেন, “নার্সারি ব্যবসা খুবই লাভজনক। সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী নার্সারি গড়ে তুললে একজন ব্যক্তি সহজেই স্বাবলম্বী হতে পারেন।” তিনি আরও বলেন, “পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বৃক্ষরোপণের বিকল্প নেই। বর্ষাকাল গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়। তাই সবাইকে এই সময়ে বেশি বেশি গাছ লাগানোর আহ্বান জানাচ্ছি।”
সবমিলিয়ে পাইকগাছার নার্সারি খাত শুধু স্থানীয় চাহিদা পূরণই নয়, বরং দেশের নানা অঞ্চলে সবুজের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে। বর্ষা এলেই তাই পাইকগাছায় গাছের চারা কেনার উৎসব লেগে যায়।
Leave a Reply