নিজস্ব প্রতিনিধি ::খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জন্য ৭১৯ কোটি ৫০ লাখ ৩৬ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে। বিভাগীয় কমিশনার ও কেসিসি প্রশাসক মোঃ ফিরোজ সরকার বৃহস্পতিবার দুপুরে নগর ভবনের শহিদ আলতাফ মিলনায়তনে এ বাজেট ঘোষণা করেন।
প্রস্তাবিত এ বাজেটে রাজস্ব তহবিলের সম্ভাব্য আয় ধরা হয়েছে (স্থিতিসহ) ৪৫৫ কোটি ৯৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। অনুরূপভাবে সরকারি অনুদান (দ্বিতীয় অংশে) ধরা হয়েছে ১৩০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। উন্নয়ন তহবিল বিশেষ প্রকল্পে ১৩৩ কোটি ২৮ লাখ ৬৩ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭৭ কোটি ৬৫ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৮১ কোটি ৯৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। সংশোধিত বাজেটে এর আকার দাঁড়িয়েছে ৬১৮ কোটি ২৫ লাখ সাত হাজার টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হার ৬২.৯৬ শতাংশ।
বাজেট ঘোষণাকালে বাজেটের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরে প্রশাসক বলেন, বাজেটে এবারও নতুন কোন কর আরোপ করা হয়নি। বকেয়া পৌরকর আদায়, নবনির্মিত সকল স্থাপনার ওপর প্রচলিত নিয়মে কর ধার্য্য এবং নিজস্ব আয়ের উৎস স¤প্রসারণের মাধ্যমে কর্পোরেশনের আয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এটি একটি উন্নয়নমূখী বাজেট। বাজেটে সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, নাগরিক সেবা স¤প্রসারণ, ডেঙ্গু প্রতিরোধ, মশক নিধন, ধর্মীয় উপাসনালয়-পার্ক-বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-রাস্তাঘাট উন্নয়ন, কেসিসি’র বিভিন্ন দপ্তর আধুনিকায়ন ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। একই সাথে বাজেটে আগস্ট-২০২৪ ও তার পূর্বের শহিদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রশাসক জানান, কেসিসির নিজস্ব সংস্থাপন ব্যয় মিটিয়ে নিজস্ব তহবিল হতে বিভিন্ন উন্নয়নখাতে মোট ১১৪ কোটি ৮৯ লাখ ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পূর্তখাত, বিএমডিএফ, অবকাঠামো নির্মাণ, সড়কবাতি, শিক্ষা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, সমাজ কল্যাণ, পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য, ভেটেরিনারি ও কঞ্জারভেন্সিখাত মিলিয়ে মোট ১০০ কোটি ২৩ লাখ ৫ হাজার টাকা, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণখাতে ১৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা এবং মূলধনখাতে ৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাজেটে এডিপির জন্য থোক ও বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫৫ কোটি টাকা। উক্ত বরাদ্দ হতে পূর্ত খাতে ২৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা, বিশেষ প্রয়োজনে জরুরি পানির চাহিদা মেটানোর জন্য ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ভেটেরিনারি খাতে ৭০ লাখ টাকা, জনস্বাস্থ্য খাতে ৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা ও কনজারভেন্সি খাতে ২১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে ১১টি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। বাজেটে এসব প্রকল্পে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে ১৩৩ কোটি ১৮ লাখ ৬৩ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে নগর অঞ্চল প্রকল্প-২ এ ৪ কোটি ২৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা, হেলদি সিটি খুলনা আরবান লিড প্রোগ্রামে ১৫ লাখ টাকা, সাসটেইনেবল ক্যাপাসিটি বিল্ডিং টু রিভিউস ইরিভারসিভেল পপুলেশন বাই প্লাস্টিক প্রকল্পে ৭০ লাখ, আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রকল্পে ৬ কোটি টাকা, ক্লাইমেন্ট চেঞ্জ এডাপটেশন আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প-২ এ ৬০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, সাসটেইনেবল আরবান ওয়াটার সাইকেল প্রকল্পে ৭২ লাখ ৩০ হাজার টাকা, কোভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড রিকভারি প্রকল্পে ৫০ কোটি টাকা, ইন্টিগ্রেটি ফর ট্রান্সমিট থ্রো ইউথ কাউন্সিল প্রকল্পে এক কোটি ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, স্মার্ট ওয়াশ ইনিশিয়েটিভ বাই ইউনিসেফ প্রকল্পে ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা, জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জীবনমান বৃদ্ধি প্রকল্পে ২৫ লাখ টাকা ও লিভেবল অ্যান্ড ইনক্লুসিভ সিটিস প্রকল্পে ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া জাতীয় এডিপিভুক্ত দুইটি প্রকল্পে ৭৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বাজেট অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শরীফ আসিফ রহমান। এ সময় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা, কেসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply