1. dailybanglarkhabor2010@gmail.com : দৈনিক বাংলার খবর : দৈনিক বাংলার খবর
শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:২৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
নিহত সাংবাদিক হায়াতের পরিবারের পাশে বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ এইচ সেলিম অধ্যয়ন গণমাধ্যম ও আন্তঃধর্ম্রীয় সংলাপ কেন্দ্রের আয়োজনে শারদীয় দুর্গাপূজা পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত দুর্যোগকালে জনদুর্ভোগ লাঘবে সরকার আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করছে -দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা খুলনার কয়রায় নৌবাহিনীর অভিযানে হরিণের মাংসসহ আটক ১ ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি, এখন কী হবে? ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী চুক্তি স্বাক্ষরের পর গাজায় উচ্ছ্বাস দেশের সব বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি পাঁচ বেসরকারি ব্যাংক একীভূত করার প্রস্তাব উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন শহিদুল আলম এখন ইসরায়েলের কারাগারে মোংলায় মাদক, অস্ত্র ও চোরাচালান রোধে যৌথ বাহিনীর তল্লাশি

গাজায় হামলা বন্ধের নির্দেশ দিলো ইসরায়েল: ট্রাম্পের প্রস্তাবে হামাসের আংশিক রাজি হবার ফল কি?

  • প্রকাশিত: শনিবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৬৫ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: ইসরায়েল সরকার শনিবার দেশের সেনাবাহিনীকে গাজায় চালানো নির্ধারিত আক্রমণ ও ‘গাজা সিটি দখলের’ অপারেশন স্থগিত রাখতে নির্দেশ দিয়েছে। অবশ্য তা আনুষ্ঠানিকভাবে ‘পূর্ণ উদ্দীপনা’ থেকে নয়, বরং সামরিক কার্যক্রমকে ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে প্রতিরক্ষামূলক কৌশলে সীমাবদ্ধ করার আহ্বান হিসেবে ধরা হচ্ছে। এই নির্দেশ দেয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি শান্তিচুক্তি-ধাঁচের প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।

হামাসকে তা গ্রহণের জন্য সময়সীমা প্রদান করেছিলেন হামাস। আর তা আংশিকভাবে মেনে নিয়েছে ফিলিস্তিনি আন্দোলনের এই প্রতিক্রিয়াই শেষমেষ ইসরায়েল সরকারের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যগুলি জানাচ্ছে।

কী ঘটেছে?
ট্রাম্প শুক্রবার সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে হামাসকে ঘোষণা করেন, তার প্রস্তাব রোববার সন্ধ্যা ৬টা (ওয়াশিংটন সময়) এর মধ্যে গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে “নরকের” মতো ফল ভোগ করবে এধরণের শক্ত প্রয়োগের হুমকিও দেন তিনি।

কয়েক ঘণ্টা পর হামাস এক বিবৃতিতে বলেন, তারা ট্রাম্পের প্রস্তাবের ‘কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত’ নিয়ে আলোচনা চাইছে, তবে তারা জীবিত কুড়িগুলি মুক্ত করা এবং কিছু শর্ত মানার অঙ্গীকার করেছে বলে জানা যায়। ওই প্রস্তাবে গাজায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির দাবি, ধরে রাখা জিম্মিদের ধাপে ধাপে মুক্তি ও গাজার প্রশাসনে অস্থায়ী তৃতীয় পক্ষের তত্ত্বাবধানে স্থানান্তরের কিছু ধারাও ছিল। এই উত্তরে ট্রাম্প ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজা বোমাবর্ষণ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে রিপোর্ট করা হয়েছে। পরে ইসরায়েলও সেনা কর্মকাণ্ড কমিয়ে আনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ইসরায়েলির সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত আর্মি রেডিও এই খবর প্রচার করেছে।

ইসরায়েলি সরকার কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল?
কিছু সংবাদসংস্থার বিশ্লেষণ দেখাচ্ছে- উপত্যকার দীর্ঘদিনের রক্তক্ষয়, আন্তর্জাতিক চাপ এবং কূটনৈতিক মধ্যস্থতাকারীদের তৎপরতাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রকাশের পর আন্তর্জাতিকভাবে দ্রুত কয়েকটি দেশের পাশাপাশি মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার ও মিশরও চুক্তি বাস্তবায়নের কৌশল নিয়ে তৎপর হয়ে ওঠে। এনিয়ে দিনের শেষের দিকে টেলিফোন কনসাল্টেশন ও তৎপর বৈঠক চলে। আর ঐ প্রেক্ষাপটেই ইসরায়েল সেনাবাহিনীকে অপারেশন সংকুচিত করার নির্দেশ দেয়া হয়।

আর্মি রেডিও রিপোর্টে বলা হয়, ‘গাজা সিটি দখলের’ বড় অপারেশনের আদেশ স্থগিত আছে এবং সামরিক কার্যক্রমকে শুধুমাত্র প্রতিরক্ষামূলক ও ন্যূনতম তীব্রতায় পরিচালিত করতে বলা হয়েছে।

হামাসের প্রতিক্রিয়া ও প্রস্তাবের সারমর্ম
হামাসের বিবৃতিতে বলা হয়, তারা ট্রাম্পের প্রস্তাবের কিছু ধারা মেনে নেওয়ার বিষয়টি ‘আংশিকভাবে’ গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে তারা জীবিত ও মৃত সমস্ত জিম্মিকে মুক্তির আশ্বাসের বিষয়টি জোর করে তুলেছে এবং গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতির সহায়তায় কুড়ি-খানেক জীবিত জিম্মি ফেরত দেওয়ার প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়েছে। কিন্তু হামাস কয়েকটি চূড়ান্ত দায়িত্বশীল শর্তে স্পষ্টতা ও কিছু বিষয় নিয়ে ‘অধিক আলোচনা’ দাবি করে যে বিশেষত গাজার প্রশাসনিক ভবিষ্যত ও বিদেশি তত্ত্বাবধানের বিষয়টি নিয়ে। সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, হামাস পুরোপুরি অস্ত্রসমর্পণ বা রাজনৈতিক ক্ষমতা ছাড়ার বিষয়টিতে একেবারে সায় দেয়নি। আর প্রস্তাবের নির্দিষ্ট অংশে সম্মত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ইসরায়েলি প্রতিক্রিয়া: নৈতিকভাবে ও নীতি-অর্থে কী বলছে নেতারা?
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষুদ্র সুরে সতর্ক মন্তব্য করেন, তিনি আন্তর্জাতিক চাপ ও মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় রেখে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছেন এবং জাতীয় স্বার্থে জরুরি সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও উল্লেখ করেন। একই সময়ে ইসরায়েলের সুরক্ষাবাহিনীর শৃঙ্খলাও অটল রাখার আহ্বান করেছেন তিনি। আর সেনা নেতৃত্বকে রেস্পন্সিভ কিন্তু সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন।

নিরাপত্তা মন্ত্রকের কূটনীতি ও কড়া অবস্থান বজায় রেখেই কিছু কৌশলগত শর্তে সমঝোতা করার আশঙ্কাও প্রকাশ করছেন ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলো। প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাবাহিনীকে আক্রমণ বন্ধে নির্দেশ দিলেও স্থানীয় পর্যায়ে ‘নূন্যতম’ প্রতিরক্ষামূলক ও আত্মরক্ষামূলক অভিযান চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বলা হয়। অর্থাৎ পুরোপুরি অস্ত্রক্ষেপ নয়, কৌশলগত হেরফের।

মানবিক প্রেক্ষাপট: গাজার বাস্তবতা কি বলছে?
গত দুই বছরে গাজায় ব্যাপক ধ্বংসপ্রাপ্তির কারণেই সেখানে লক্ষ লক্ষ মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। যা বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যু, অপার সামাজিক বিপর্যয়, খাদ্য ও ওষুধের তীব্র অভাব এবং মীমাংসাহীন বাস্তুচ্যুতি। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো বারবার বলেছেন যে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ব্যতীত মানবিক বিপর্যয় রোধ করা কঠিন। গাজার বিস্তৃত ক্ষয়ক্ষতির ছবিগুলো উদ্ধারকাজ, শরীরযন্ত্রে আহতদের সেবা ও অনাবিল কিশোর-ভিত্তিক দুর্দশা এই প্রেক্ষাপটেই চলমান। তাই এমন কোনো রাজকীয় কূটনৈতিক পদক্ষেপই যদি যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে পারে, সেটি সাময়িক হলেও বেসামরিকদের রক্ষা করবে এ তাৎপর্যপূর্ণ।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পথচলা
ট্রাম্পের ‘শান্তি-প্রস্তাব’ এবং হামাসের আংশিক সম্মতি কূটনৈতিকভাবে অবশ্য ততক্ষণ স্থায়ী হবে না যতক্ষণ না ইসরায়েল ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারী পক্ষের মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। আন্তর্জাতিক সমাজ ও জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, নানান সার্বভৌম দেশ এমন এক সমাধান চান যা কেবল যুদ্ধবিরতি নয়, পুনর্গঠন, আশ্রয় ও খাদ্য-সুরক্ষা এবং বিচার-সমতার একটি কাঠামোও নিশ্চিত করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ রাজনৈতিকভাবে তীব্র বিনিময়সাপেক্ষ, কিছু দেশ এটি স্বাগত জানালেও কিছু দেশ এই প্রস্তাবকে ‘একতরফা’ বলেও সমালোচনা করেছে। কয়েকটি মানবাধিকার গোষ্ঠী সতর্ক করে দিয়েছে, যদি যুদ্ধবিরতি অচিরেই বাস্তবায়িত না হয়, তাতে মানসিক ও শারীরিক বিপর্যয় আরও বাড়বে।

বাস্তবে কি সম্ভব?
কোনো কাগজে স্বাক্ষর বা অঙ্গীকারই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজ্য হচ্ছে মাঠে বাস্তব কর্ম এবং তদারকি। যদি হামাস সত্যিই জিম্মিদের মুক্তি দেয়, এবং ইসরায়েল প্রতিকারের বদলে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধান মেনে নিয়ে লং-টার্ম নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়, তাহলেই স্থায়ী শান্তির সম্ভাবনা দেখা দেবে।

কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা ও আঞ্চলিক জটিলতাগুলো মধ্যস্থতাকারী রাষ্ট্রগুলোর স্বার্থ, প্রতিপক্ষদের আভ্যন্তরীণ চাপ, সোশ্যাল মিডিয়ার উত্তপ্ত ভাষাসহ সব মিলিয়ে পরিস্থিতি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তাই কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এতদিনই সফল হবে যতক্ষণ তা স্বচ্ছ, তদারকাকারী ও মানবকেন্দ্রিক হবে।

শান্তি কীভাবে নিশ্চিত করা যায়?
এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো, তৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা, জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করা, মানবিক প্রবেশপথ খুলে দিয়ে গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ তদারকির মধ্যে পুনর্গঠন করা। কেবল সেনা পদক্ষেপ নয়, কূটনীতি, পুনর্বাসন, খাদ্য ও চিকিৎসাসহ মৌলিক সেবার পুনঃপ্রতিষ্ঠাই গাজার মানুষের দীর্ঘমেয়াদী রক্ষা নিশ্চিত করবে। এছাড়া আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে কাতার, মিশর, সুদৃঢ় বিশ্ব সংস্থাগুলোর একটু বেশি জবাবদিহিতা ও ভূমিকা নিতে হবে যাতে কোনো এক পক্ষই এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে। এই শর্ত পূরণ হলে সম্ভবপর্যন্ত শান্তি কেবল অনিশ্চিত স্বপ্ন নয়, বাস্তবতার অংশ হতে পারে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত দৈনিক বাংলার খবর
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট