1. dailybanglarkhabor2010@gmail.com : দৈনিক বাংলার খবর : দৈনিক বাংলার খবর
বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:৪৯ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
ইসরায়েলের বোমার আঘাতে আরও ৯১ ফিলিস্তিনি নিহত স্থগিতের চেষ্টা হলেও সরকার নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন নিশ্চিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ন্যায়বিচারের পথে বাংলাদেশ: ৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞের বিচার ও নতুন রাষ্ট্র নির্মাণের অঙ্গীকার কমরেড রসময় বিশ্বাসকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাধিস্থ পাইকগাছায় ১৪৩ পূজা মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজার প্রস্তুতি শার্শার রুদ্রপুর সিমান্তে ৫ বাংলাদেশি নারী-পুরুষকে আটক করেছে বিজিবি এবারের দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রথম চালানে সাড়ে ৩৭ টন ইলিশ গেলো ভারতে খুলনা বিভাগীয় শিশুশ্রম কল্যাণ পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত আবু হোসেন বাবুর বাড়িতে হামলার প্রতিবাদে দাকোপে বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও পথ সভা দেশে জনসংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে- ফিরোজ সরকার

ন্যায়বিচারের পথে বাংলাদেশ: ৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞের বিচার ও নতুন রাষ্ট্র নির্মাণের অঙ্গীকার

  • প্রকাশিত: বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ১১ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি:: ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল চরম দমনমূলক। রাষ্ট্রক্ষমতা রক্ষার নামে একটি সরকারের সর্বাত্মক দমননীতির ফলে দেশের শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক কর্মীরা এক নজিরবিহীন সংকটের মধ্যে পড়েন।

রাজপথে নিরীহ শিক্ষার্থীদের উপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। হাজারো পরিবার আজও সেই রক্তক্ষরণের ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই হত্যাযজ্ঞ এক গভীর কলঙ্ক যা বিচার ছাড়া জাতির বিবেক শান্তি পাবে না।

ক্ষমতার অপব্যবহার ও রাষ্ট্রযন্ত্রের দমননীতি

তৎকালীন সরকার প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ব্যাংকিং খাত, এমনকি গণমাধ্যমকেও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। নির্বাহী বিভাগের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের সশস্ত্র সহযোগী সংগঠনগুলোকে রাজপথে নামিয়ে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের উপর হামলা চালানো হয়। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই ঘটনাকে `রাষ্ট্র পৃষ্ঠপোষক সন্ত্রাস‘ আখ্যা দিয়েছিল।

দৈনিক আমার সংবাদ পত্রিকা প্রায় হাজারেরও বেশি সংবাদ প্রকাশ করে আন্দোলনের প্রকৃত চিত্র দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেছিল। সে সময় পত্রিকাটির সাংবাদিকরা হামলার শিকার হন। অনেককে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।

দৈনিক আমার সংবাদের এক প্রতিবেদক বলেন, “আমরা জীবন হাতে নিয়ে রিপোর্ট করেছি। কারণ ইতিহাসের সত্য রেকর্ড হওয়া জরুরি ছিল।”

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু

বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞ, গুম এবং দমনমূলক কর্মকাণ্ডের বিচার শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিনে সাক্ষ্যগ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ শেষ হয়েছে। দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং আজ বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) শেষ সাক্ষ্য দিয়েছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হলো— মামলার অন্যতম আসামি ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের রাজসাক্ষী হওয়া।

তিনি আদালতে স্বীকার করেছেন যে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে নির্বিচারে গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এই সাক্ষ্য আদালত কক্ষে উপস্থিত সবাইকে স্তম্ভিত করে।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সাক্ষ্য বিচারের গতিপথ পাল্টে দিতে পারে।

আইন সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা

জনগণের মধ্যে এখন একটাই প্রত্যাশা এমন কঠোর আইন সংস্কার হতে হবে যাতে ভবিষ্যতে কোনো সরকার, কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতা ধরে রাখতে মানুষের প্রাণ নিয়ে খেলতে না পারে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, শুধু বিচার করলেই হবে না, বরং আইন ও প্রশাসনিক কাঠামোতে এমন সংস্কার আনতে হবে যাতে ভবিষ্যতে ক্ষমতার অপব্যবহার অসম্ভব হয়ে ওঠে।

আইন বিশেষজ্ঞ ড. রুবিনা হক বলেন, “আমরা যদি এখন কঠোর আইন প্রণয়ন না করি এবং প্রশাসনিক জবাবদিহিতা না বাড়াই, তাহলে ভবিষ্যতে আবারও একই ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য বিচার প্রক্রিয়ার পাশাপাশি আইন সংস্কার অপরিহার্য।”

ভুক্তভোগী পরিবারের আকাঙ্ক্ষা

হাজারো পরিবার আজও ন্যায়বিচারের আশায় দিন গুনছে। সন্তান হারানো বাবা-মায়েরা আদালতের প্রতিটি খবর গভীর মনোযোগে অনুসরণ করছেন।

কুমিল্লার এক মা যিনি তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেকে হারিয়েছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “আমরা চাই শুধু বিচার। আমার সন্তানের খুনিদের ফাঁসি দেখতে চাই। যেন আর কোনো মা তার সন্তানকে হারাতে না হয়।”

নতুন বাংলাদেশের অঙ্গীকার

৫ আগস্টের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে একটি শিক্ষা দিয়েছে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বাধীনতার পর এটি ছিল দ্বিতীয় বড় জাগরণ যেখানে সাধারণ মানুষ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রাজপথে দাঁড়িয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাফিজুল ইসলাম বলেন, “এই বিচার শেষ হলে আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ পাবো। একটি বাংলাদেশ যেখানে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন নিশ্চিত হবে।”

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ

তবে বিচার প্রক্রিয়ার পথে নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রমাণ সংগ্রহ, সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দীর্ঘসূত্রতা এড়ানো এখন বড় কাজ। আইন সংস্কারের ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক ঐকমত্য জরুরি।

একজন আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেন, “বাংলাদেশকে এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। বিশ্বকে দেখাতে হবে যে তারা অতীতের নৃশংসতার বিচার করতে পারে। এটি শুধু দেশের জন্য নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও একটি দৃষ্টান্ত হবে।”

৫ আগস্টের আগে যে হত্যাযজ্ঞ ঘটেছে, তা শুধু রাজনৈতিক সহিংসতা নয় এটি ছিল মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। তাই এর বিচার শুধু নিহতদের পরিবারের জন্য নয়, গোটা জাতির জন্য প্রয়োজন।

বাংলাদেশের জনগণ এখন একটি নতুন সমাজ গড়ার প্রত্যাশায় আছে—যেখানে ক্ষমতা জনগণের হাতে থাকবে, যেখানে আইনের শাসন অটুট থাকবে, যেখানে কোনো সরকার আর কখনোই জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিতে পারবে না।

বাংলাদেশের মানুষ আজ শপথ নিচ্ছে—“আমার দেশ, আপনার দেশ, বাংলাদেশ” গড়ে তোলার জন্য। যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো ৫ আগস্ট না আসে, যাতে আর কোনো মা তার সন্তানের লাশ রাজপথ থেকে তুলতে না হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত দৈনিক বাংলার খবর
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট