এম জালাল উদ্দীন:পাইকগাছা:: “ইচ্ছে শক্তি বড় শক্তি” প্রবাদ বাক্যের এই সত্য প্রমাণ করেছেন পাইকগাছার প্রতিবন্ধী গোবিন্দ বিশ্বাস (৫৭)। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও থেমে থাকেননি তিনি। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বাদাম ও ছোলা বিক্রি করে নিজের সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন এই সংগ্রামী মানুষ।
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নের পুরাইকাটি গ্রামের মৃত শক্তিপদ বিশ্বাসের চার সন্তানের মধ্যে ছোট ছেলে গোবিন্দ বিশ্বাস। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় নারকেল গাছ থেকে পড়ে মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি। মাথা ও হাত-পা ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়লে দীর্ঘ দুই বছরের চিকিৎসার পরও স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাননি। অভাবের সংসারে ভরসা হয়ে ওঠেন তিনি নিজেই। মাত্র ১৬ বছর বয়সে শুরু করেন বাদাম ও ছোলা ভাজা বিক্রি।
প্রথমে পাইকগাছা সিনেমা হলে বাদাম বিক্রি শুরু করলেও পরবর্তীতে কোর্ট চত্বরে স্থায়ীভাবে বসেন তিনি। প্রতিদিন সকালে বাদাম ও ছোলা নিয়ে পাইকগাছা আদালতের সামনে বটতলায় একটি ছোট্ট টেবিল সাজিয়ে বসেন। প্রতিদিন প্রায় ২ থেকে আড়াই হাজার টাকার বাদাম-ছোলা বিক্রি করে চার থেকে পাঁচশ টাকা আয় হয় তার। এই সামান্য আয় দিয়েই কোনোভাবে সংসার চালাচ্ছেন গোবিন্দ।
এই আয়ে তিনি ইতোমধ্যে দুই মেয়েকে বিবাহ দিয়েছেন এবং ছোট মেয়েকে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াচ্ছেন। তবে সবচেয়ে বড় দুঃখের বিষয়—তার একমাত্র ছেলে রাহুল বিশ্বাস (১৬) হৃদরোগে (হার্টে ছিদ্র) ভুগছে। টাকার অভাবে তাকে চিকিৎসা করাতে পারছেন না অসহায় এই বাবা। বর্তমানে ছেলেটি বোয়ালিয়া মোড়ের এক চায়ের দোকানে কাজ করে।
আদালতে আসা অনেকেই বলেন, গোবিন্দ বিশ্বাস একজন সহজ-সরল ও সৎ মানুষ। প্রতিবন্ধী জেনেও অনেকেই তার কাছ থেকে বাদাম-ছোলা কিনে খান। প্রেসক্লাব পাইকগাছার সাধারণ সম্পাদক এম জালাল উদ্দীন বলেন, গোবিন্দ বিশ্বাস দীর্ঘদিন ধরে বাদাম-ছোলা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। তিনি সত্যিই এক সংগ্রামী মানুষ। আমরা তার কল্যাণ কামনা করছি।
নিজের অসহায়তার কথা জানিয়ে গোবিন্দ বিশ্বাস বলেন, আমার ছেলেটার হার্টে ছিদ্র রয়েছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। সমাজের বৃত্তবান ব্যক্তি ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে সাহায্যের আবেদন করছি।
গোবিন্দ বিশ্বাসের জীবন কাহিনী যেনো জীবনযুদ্ধে হার না মানা সংগ্রামী মানুষের এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
Leave a Reply