
নিজস্ব প্রতিবেদক:: রাজধানীর পল্লবীতে যুবদলের এক নেতাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার পর পুরো এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
রাজধানীর পল্লবীতে সোমবার সন্ধ্যায় ঘটে গেলো আরেকটি আলোচিত হত্যাকাণ্ড।
যুবদলের পল্লবী থানা শাখার সদস্যসচিব গোলাম কিবরিয়া সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় দুর্বৃত্তদের লক্ষ্যবস্তু হন।
প্রতক্ষ্যদর্শীদের ভাষ্য, কয়েকজন মোটরসাইকেল আরোহী দ্রুতগতিতে এসে তার দিকে ধারাবাহিকভাবে গুলি ছোড়ে।
ঘটনাস্থলের কাছে থাকা লোকজনের দাবি, মোট পাঁচ রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়।
গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন গোলাম কিবরিয়া। সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে জরুরি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক কিছুক্ষণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী এক দোকানকর্মী জানান, হামলার সময় এলাকায় কোনো ধরনের পূর্ব উত্তেজনা বা সংঘর্ষ চলছিল না। সবকিছুই খুব দ্রুত ঘটে যায়।
তিনি বলেন, ওরা এসে খুব কাছে থেকে গুলি করে। কিবরিয়া ভাই পড়ে যেতেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মোটরসাইকেল ঘুরিয়ে পালিয়ে যায়।
হামলাকারীরা কারা কিংবা কেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটল তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে পুলিশের একটি প্রাথমিক ধারণা দুর্বৃত্তরা আগে থেকেই লক্ষ্য নির্ধারণ করে হামলায় নামে এবং তাদের হামলার ধরন ছিল ‘প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দলের’ মতো।
ঘটনার পর যুবদল সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, গোলাম কিবরিয়া আমাদের দলের সক্রিয় সংগঠক ছিলেন। এই হত্যাকাণ্ড শুধু একজন নেতাকে হারানোর বিষয় নয়, এটি পল্লবীসহ পুরো এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
তিনি আরও দাবি করেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা নানাভাবে হামলার শিকার হচ্ছেন এবং কিবরিয়ার হত্যাকাণ্ডও তারই ধারাবাহিকতা হতে পারে।
গোলাম কিবরিয়ার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই পল্লবী এলাকায় যুবদল ও বিএনপির নেতাকর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। বিশেষ করে হাসপাতাল চত্বরে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ভিড় আরও ঘন হতে থাকে। নেতাকর্মীরা দলবদ্ধভাবে হাসপাতালে পৌঁছালে সেখানে মুহূর্তেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয়রা বলছেন, সন্ধ্যা পর্যন্ত যে এলাকা ছিল স্বাভাবিক হত্যাকাণ্ডের পর তা খুব দ্রুত অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। দোকানপাট দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়, রাস্তায় মানুষের চলাচল কমে আসে।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, যুবদলের নেতাকে যেভাবে প্রকাশ্যে গুলি করল, তাতে মানুষের মধ্যে ভয় বেড়ে গেছে। এখনো অনেকে ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন।
হত্যার পরপরই পল্লবী থানার পুলিশ, ডিবি ও সিআইডির একাধিক দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করে। এলাকাজুড়ে পুলিশ টহল বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি হাসপাতালের নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে যাতে কোনো ধরনের উত্তেজনা ছড়িয়ে না পড়ে।
পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে মনে হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। যারা হামলায় জড়িত—তাদের শনাক্ত করে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে।
তিনি আরও জানান, গোলাম কিবরিয়ার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলি লেগেছে এবং কাছ থেকে গুলি করার প্রমাণ মিলেছে।
ঘটনাটি রাতেই রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। বিএনপি ও যুবদলের নেতারা একে ‘লক্ষ্যবস্তু হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তাদের অভিযোগ—বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা নতুন কিছু নয়, তবে এবার প্রকাশ্য রাস্তায় এমন ঘটনা রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও উত্তপ্ত করে তুলবে।
অন্যদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি না এলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক সূত্র বলছে সরকার এই হত্যাকাণ্ডকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।
এখন পর্যন্ত কোনো গ্রেপ্তার হয়নি। তবে পুলিশের ধারণা হামলাকারীরা হত্যার পরপরই রাজধানীর বাইরে পালিয়ে যেতে পারে। এজন্য শহরের প্রবেশ–প্রস্থান ও মহাসড়কে চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে।
তদন্ত–সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, কিবরিয়ার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক তৎপরতা, ব্যক্তিগত বিরোধ, আর্থিক লেনদেন সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনো বিষয়ই আমরা বাদ দিচ্ছি না।
রাজধানীর মতো ব্যস্ত এলাকায় প্রকাশ্য গুলি করে হত্যা—এই ঘটনা রাজধানীর নিরাপত্তা প্রশ্নে আবারও নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। গোলাম কিবরিয়ার মৃত্যুর পর পল্লবীর পরিস্থিতি এখনো উত্তেজনাকর, আর তদন্তকারীরা বলছেন এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কারণ ও ব্যক্তিদের শনাক্ত করা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
Leave a Reply