1. dailybanglarkhabor2010@gmail.com : দৈনিক বাংলার খবর : দৈনিক বাংলার খবর
রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:০৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
১৪ দিনে দেশে এলো ১৪ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স অন্যায়, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব প্রতিরোধে জামায়াত সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে-ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে বিএনপির ৪২২ জন নেতাকর্মী নিহত: মির্জা ফখরুল পদত্যাগ করছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনাই এখন সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ-ড. ইউনূস সাংবাদিক ও পুলিশ একে অপরের পরিপূরক-ডিএমপি কমিশনার অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার পরিকল্পনা জানতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-পররাষ্ট্র সচিব মুক্তিযুদ্ধ না করেও সনদ নেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা-মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকারকে ২০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গ্রেপ্তার

সেনাবাহিনীর বিক্ষোভ দমনের অস্বীকৃতি হাসিনার ভাগ্য নির্ধারণ করেছে-রয়টার্সের বিশ্লেষণ

  • প্রকাশিত: বুধবার, ৭ আগস্ট, ২০২৪
  • ১৬ বার পড়া হয়েছে

ডেস্ক:: প্রবল গণআন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার আগের রাতে সেনাপ্রধান তার জেনারেলদের সঙ্গে বৈঠক করেন। যেখানে তিনি সিদ্ধান্ত নেন কারফিউ বলবৎ রাখতে সেনারা বেসামরিক মানুষের ওপর গুলি চালাবে না। বৈঠকের আলোচনা সম্পর্কে জানেন— এমন দুজন সেনা কর্মকর্তা ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

বিষয়টি সম্পর্কে অবগত একজন ভারতীয় কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান পরদিন সকালে গণভবনে যান এবং প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তিনি দেশজুড়ে যে কারফিউ ডেকেছেন, তা বাস্তবায়নে তার সেনারা অপারগতা প্রকাশ করেছে।

ওই ভারতীয় কর্মকর্তা বলেন, ‘বার্তাটি পরিষ্কার ছিল, শেখ হাসিনার প্রতি আর সেনাবাহিনীর সমর্থন ছিল না।’

রয়টার্স বলছে, ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যকার অনলাইন বৈঠকের বিশদ বিবরণ এবং শেখ হাসিনার কাছে দেওয়া বার্তা আগে প্রকাশিত হয়নি। তবে ওই বৈঠক ব্যাখ্যা থেকে বোঝা যায়, হাসিনার ১৫ বছরের শাসনকালে তিনি সামান্য ভিন্নমত দমন করেছেন। গত সোমবার তিনি বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর তার এমন বিশৃঙ্খল শাসনকাল আকস্মিকভাবে শেষ হয়েছে।

গত রবিবার দেশব্যাপী সংঘর্ষে কমপক্ষে ৯১ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হওয়ার পরে দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি করা হয়েছিল। যা গত জুলাইয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিন ছিল।

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী রবিবারের সন্ধ্যার বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি একে যেকোনো বিশৃঙ্খলার পর হালনাগাদ তথ্য নিতে নিয়মিত বৈঠক হিসেবে বর্ণনা করেন। তবে সেই বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আরও প্রশ্ন করলে তিনি বিস্তারিত জানাননি।

এ বিষয়ে মন্তব্য জন্য শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। এছাড়া তার ছেলে ও উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদে মন্তব্যে জন্য বারবার অনুরোধ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

এদিকে শেখ হাসিনার শাসনের শেষ ৪৮ ঘণ্টার পরিস্থিতি বোঝার জন্য গত সপ্তাহের ঘটনাবলি সম্পর্কে অবগত চারজন সেনা কর্মকর্তা এবং দুটি সূত্রসহ ১০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্স। বিষয়টির সংবেদনশীলতার কারণে তাদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেছেন।

শেখ হাসিনা গত ৩০ বছরের মধ্যে ২০ বছর ধরে বাংলাদেশ শাসন করেছেন, হাজারো বিরোধী নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারের পর গত জানুয়ারিতে ১৭ কোটি মানুষের দেশে তিনি চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচিত হন। সেই নির্বাচন তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীরা বর্জন করেছিল।

তবে উচ্চ বেকারত্বের মধ্যে প্রবলভাবে লোভনীয় সরকারি চাকরিতে কোটা সংরক্ষণের জন্য আদালতের রুলের জেরে বিক্ষোভের সূত্রপাত হওয়ার মধ্য দিয়ে হাসিনার কঠোর নিয়ন্ত্রণকে চ্যালেঞ্জ করা হয়। যদিও আদালতের সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কিন্তু বিক্ষোভ দ্রুতই হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলনে রূপ নেয়।

শেখ হাসিনার প্রতি সমর্থন প্রত্যাহারের বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে প্রকাশ্যে ব্যাখ্যা দেননি সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। কিন্তু বাংলাদেশের তিন সাবেক জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, বিক্ষোভের মাত্রা এবং কমপক্ষে ২৪১ জন নিহত হওয়ার কারণে যেকোনো মূল্যে হাসিনাকে সমর্থন করা কঠিন হয়ে পড়ে।

অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, সেনাদের মধ্যে অনেক অস্বস্তি ছিল, যা সম্ভবত সেনাবাহিনীর প্রধানের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। কারণ, সেনারা বাইরে ছিলেন এবং কী ঘটছে, তা তারা দেখছেন।

ওয়াকার-উজ-জামান বৈবাহিক সূত্রে হাসিনার আত্মীয়। তিনি গত শনিবার প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তার সমর্থন নড়বড়ে হওয়ার লক্ষণ দেখিয়েছিলেন। সেদিন তিনি একটি অলংকৃত কাঠের চেয়ারে বসেছিলেন। সেদিন সেনাবাহিনীর মতবিনিময় সভায় শতাধিক উর্দিধারী সেনা কর্মকর্তার সামনে বক্তৃতা করেছিলেন। সেনাবাহিনী পরে এই আলোচনার কিছু বিবরণ প্রকাশ্যে আনে।

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী বলেন, সেনাপ্রধান ঘোষণা দেন, জীবন রক্ষা করতে হবে। তিনি কর্মকর্তাদের ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানান।

এটাই ছিল প্রথম ইঙ্গিত যে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী জোরপূর্বক সহিংস বিক্ষোভ দমন করবে না, যা হাসিনাকে অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে।

অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা গত সোমবার কারফিউ অমান্য করে রাস্তায় নেমেছিলেন। তাদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শাহেদুল আনাম খানও ছিলেন। তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী আমাদের বাধা দেয়নি। তিনি যা অঙ্গীকার করেছিলেন, সেনাবাহিনী তা করেছে।’

‘স্বল্প সময়ের নোটিশ’

অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশব্যাপী কারফিউর প্রথম দিন গত সোমবার হাসিনা গণভবনের ভেতরে ছিলেন। রাজধানী ঢাকার একটি খুবই সুরক্ষিত কমপ্লেক্স এটি, যা প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাইরে বিস্তীর্ণ শহরের রাজপথে লোকজন জড়ো হয়েছিল। হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য আন্দোলনের নেতাদের গণযাত্রার ডাকে সাড়া দিয়ে লাখো মানুষ শহরের কেন্দ্রস্থলের দিকে যাচ্ছিলেন।

ভারতীয় কর্মকর্তা ও বিষয়টির সম্পর্কে অবগত দুই বাংলাদেশির তথ্য অনুযায়ী, পরিস্থিতি হাসিনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় ৭৬ বছর বয়সী এই নেত্রী সোমবার সকালে দেশ ছেড়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নেন।

বাংলাদেশের একটি সূত্র জানায়, লন্ডনে বসবাস করা শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা সে সময় ঢাকায় ছিলেন। তারা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন এবং একসঙ্গে দেশ ছাড়েন। স্থানীয় সময় দুপুরের দিকে তারা ভারতের উদ্দেশে রওনা হন।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর মঙ্গলবার দেশটির সংসদে বলেছেন, যোগাযোগ থাকা বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তিকে জুলাই মাসজুড়ে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি সমাধানের জন্য আহ্বান জানিয়েছিল নয়াদিল্লি। কিন্তু কারফিউ উপেক্ষা করে সোমবার ঢাকায় জনতা জড়ো হওয়ায় হাসিনা নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তৃপক্ষের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। খুব সংক্ষিপ্ত নোটিশে তিনি তখনকার মতো ভারতে আসার জন্য অনুমোদন চেয়ে অনুরোধ জানিয়েছিলেন।

ভারতের আরেক কর্মকর্তা বলেন, হাসিনাকে ‘কূটনৈতিকভাবে’ জানানো হয়েছিল, ঢাকার পরবর্তী সরকারের সঙ্গে দিল্লির সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে—এ কারণে তার অবস্থান সাময়িক হতে হবে।

এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করা হলেও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চান বিক্ষোভকারী ছাত্ররা।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাকে ড. ইউনূস বলেছেন, ভারতের ‘ভুল লোকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল…দয়া করে আপনার পররাষ্ট্রনীতি পুনর্বিবেচনা করুন।’

এ বিষয়ে সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য রয়টার্স চেষ্টা করলেও ড. ইউনূসকে তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।

সোমবার বিকেলে শেখ হাসিনাকে নিয়ে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি পরিবহন উড়োজাহাজ দিল্লির উপকণ্ঠে হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে। ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তার তথ্যমতে, সেখানে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।

মূলত ১৯৭৫ সালে শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবর রহমানকে হত্যার পর তিনি কয়েক বছর ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। যেখানে দেশটির রাজনৈতিক অভিজাতদের সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়।

বাংলাদেশে ফিরে শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসেন। তবে ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগের প্রতি তাকে তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে বেশি সংবেদনশীল হিসেবে দেখা হতো। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিও তার ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানকে বাংলাদেশের ১ কোটি ৩০ লাখ হিন্দুর জন্য অনুকূল বলে মনে করেছিল।

এদিকে বাংলাদেশ থেকে শেখ হাসিনাকে চলে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ায় দেশটির অবসরপ্রাপ্ত সেনাদের মধ্যে এখনো অসন্তোষ রয়ে গেছে।

শাহেদুল আনাম খান বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, তাকে নিরাপদে চলে যেতে দেওয়া উচিত ছিল না। এটা একটা বোকামি ছিল।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত দৈনিক বাংলার খবর
Theme Customized By BreakingNews