1. dailybanglarkhabor2010@gmail.com : দৈনিক বাংলার খবর : দৈনিক বাংলার খবর
রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ১১:১৩ অপরাহ্ন

অনিয়মের স্বর্গরাজ্য ডুমুরিয়া সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস !

  • প্রকাশিত: রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫
  • ২৮ বার পড়া হয়েছে

প্রতিকী ছবি

অরুন দেবনাথ ডুমুরিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি:: যে কোনো বিষয়ে সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতির অভিযোগ তুলেই ডুমুরিয়া উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে গত কয়েক মাস ধরে জমি রেজিষ্ট্রি আটকে দেওয়া হচ্ছে। তবে অফিস ম্যানেজ করলেই সবকিছু সচল হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে জমির দলিল করতে আসা দলিল লেখক, ক্রেতা-বিক্রেতা’র সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বহু বছর ধরে জমি(ভূমি) রেজিষ্ট্রি করতে ‘অফিস খরচ-সহ বিভিন্ন নামে কিছু টাকা দেওয়ার রেওয়াজটি মেনেই এখানে দলিল রেজিষ্ট্রির কাজ চলছিলো। কিন্তু গত ৩০ এপ্রিল-২০২৫ সাব-রেজিষ্ট্রার হিসাবে মো. নাহিদুজ্জামান ডুমুরিয়ায় যোগ দেওয়ার পর থেকেই সামান্য আইনি ত্রুটি বা নামের বানানে ভুল বের করেই ‘এ দলিল রেজিষ্ট্রি হবে না’ বলে আটকে দিচ্ছে। তখন সংশ্লিষ্ট দলিল লেখক তার কাজ উদ্ধারের জন্য সাব-রেজিষ্ট্রারের একান্তজন(নকল নবিস) তপন মন্ডল’র সঙ্গে কথা শেষে ১০-২০-৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা দিতে পারলে সেই জমি রেজিষ্ট্রি হয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের সিমাহীন দুর্নীতি প্রসঙ্গে রুজি-রোজগার বন্ধের আশংকায় নাম-প্রকাশে অনিচ্ছুক দলিল লেখকরা বলেন, আমরা বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে অনেক যাচাই-বাছাই করে একটা দলিল তৈরি করে সাব-রেজিষ্ট্রারের সামনে দাখিল করার পর তিনি খুঁজতে থাকেন, কোথাও কোনো ত্রুটি আছে কি-না। অনেক ক্ষেত্রে জমির পরচায় যে নাম লেখা থাকে, দাতার এন.আই.ডি কার্ডে কোনো না কোনো ভুল বের করেই বলেন, যাও এ দলিল হবে না। ভুল-সংশোধন করে নিয়ে এসো। কিন্তু নাম-সংশোধন তো মুখের কথা নয়। তাই ঝামেলা থেকে বাঁচতে তপনের মাধ্যমে সর্বনি¤œ ১০ হাজার থেকে শুরু করে সমস্যার গুরুত্বানুসারে ২০-৫০ থেকে লক্ষাধিক টাকা দিলেই রেজিষ্ট্রি হচ্ছে। এছাড়া তিনি নামপত্তন রেকর্ড থাকার পরও, বহু পূর্বের পিট দলিল, এস.এ খতিয়ানের অনলাইন চাইবে, মৌজার নাম ভুল থাকলে বা মৌজার জে.এল নম্বর নিয়ে আর.এস পরচায় এক-রকম তো এস.এ পরচায় অন্যরকম থাকলেই রেজিষ্ট্রি আটকে দেবে। কোনো জমিতে বাড়ি উল্লেখ থাকলে সেই জমির আংশিক বিক্রি করতে গেলেই তিনি বলেন ৬% উৎস কর দিতে হবে। আর গুটুদিয়া ইউনিয়নের কোনো জমি (প্লট বিবেচনায়) হলেই বলবে, ২% ভ্যাট দিতে হবে, তা-না হলে রেজিষ্ট্রি বন্ধ। তাছাড়া যতো সমস্যাই বের হোক, তিনি বলবে, ‘তপনের সঙ্গে আলোচনা করো।’
এ প্রসঙ্গে ডুমুরিয়া দলিল লেখক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন খান বলেন, সর্বশেষ জরিপ(আর.এস) হয়ে যাওয়ার পরও তিনি নেটের এস.এ পরচা, মূল-দলিল, নামের ভুল পেলে, ১০-২০ হাজার টাকা দিলে দলিল ছাড়ে। এছাড়া লাখে(জমির মূল্য) ৩-৪’শ টাকা তো এমনিই নেয়। দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ফারুক খান বলেন, ডুমুরিয়ার ৭০ জন লেখকের কাছে আলাদা করে জিজ্ঞাসা করলে এই সাহেবের আসহনীয় দুর্নীতির কথা জানতে পারবেন। তিনি দলিলে কোনো না কোনো ভুল বের করে ২০-৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা চাচ্ছে। এক-কথায় ডুমুরিয়ার রেকর্ডে এমন দুর্নীতিগ্রস্থ অফিসার আগে আর আসেনি। খুলনা জেলা দলিল লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি বাহাউদ্দিন খন্দকার বলেন, ডুমুরিয়ার সাব-রেজিষ্ট্রারের কাছে যে-কোনো দলিল নিয়ে গেলে তিনি যে-কোনো পন্থায় সর্ব-নি¤œ ১০ হাজার টাকা নিবে।
ডুমুরিয়া উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রার মো. নাহিদুজ্জামান তার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এস.এ পরচা থেকে বর্তমান পর্যন্ত মালিকানার হিস্ট্রি যাচাই-বাছাই করেই দলিল করা আমার দায়িত্ব। কোনো কোনো সময় মানবিক সহয়তার করার ক্ষেত্রে কেউ কেউ ভুল বুঝতে পারে বা সুবিধা নিতে পারে। তবে আমি ও তপনের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ যথার্থ নয়।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমিন বলেন, জনস্বার্থ বিঘিœত হচ্ছে এমন অভিযোগ পেলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেবো। খুলনা জেলা রেজিষ্ট্রার মো. মিজানুর রহমান বলেন, দূর্ণীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত দৈনিক বাংলার খবর
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট