
মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি:: মোংলা পোর্ট পৌরসভার কসাইখানার অবস্থা দেখলেই মাংস খাওয়ার স্বাদ মিটে যায়, দীর্ঘদিনেও মেরামত ও সংস্কার না হওয়ায় ভেঙ্গে গেছে ঘর, উড়ে গেছে টিনের চালা, নেই পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা। চর্তুদিকে পচাঁগলা ময়লা আবর্জনার স্তুপের মাঝখানে জবাই করা হয় গরু, ছাগল ভেড়া সহ বিভিন্ন পশু, ঠিক সেই খানেই ফেলে রাখা হয় জবাইকৃত পশুর নারী-ভুরি হারগোড় সহ সব রকমের বর্জ্য। যেখানে-সেখানে ছড়ানো ছিটানো ময়লার স্তুপ, পচা-গলা রক্ত মাংস আর হাড়গোরে ধরেছে পোকা। অস্বাস্থকর পরিবেশে প্রস্তুুত করা হচ্ছে বাজারজাত করা মাংস। ফলে নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কসাইদের। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন কিলখানা তৈরী করার জন্য বরাদ্ধ হয়েছে টাকা, তবে কাজ এখনও শুরু করা হয়নি, নতুন কসাইখানা তৈরী হলে থাকবে না দুর্ভোগ।
মাংস ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, মোংলা পোর্ট পৌরসভা স্থাপিত হয় ১৯৭৫ সালে। সেই থেকেই শহরের প্রাণকেন্দ্রে গড়ে উঠেছে মোংলা পোর্ট পৌর কসাইখানাটি। বর্তমানে পৌরসভা প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত হওয়ার পর রাস্তাঘাটেরও ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু কসাইখানাটি এখনও রয়েছে সেই আগের মতই। পুরনো আমলের কসাইখানায় নেই ড্রেনেজ ব্যবস্থা। জমে আছে রক্ত আর ময়লা পানি, বজ্র্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় তৈরী হয়েছে গোবরের স্তুপ। স্যাঁতসেঁতে অবস্থ, পানি জমে জন্ম নিয়েছে পোকা। আর সেখানেই জবাই করা হচ্ছে গরু, ছাগল, ভেড়া মহিষসহ বিভিন্ন পশু। পাশেই জবাই করা গরু মহিসের ভুড়ি, চামড়া ও গোশতের উচ্ছিষ্ট ফেলা হয়েছে। সেখানে কাকের ঝাঁক আর দলে দলে কুকুরের আনাগোনা। আস্ত চামড়া ছেলা গরু আর গোশতের বড় বড় অংশের ওপরে নোংরা পায়ে বসে ঝিল্লি টেনে ছেঁড়ায় ব্যস্ত কাক। একইভাবে কুকুরগুলোও হেঁটে বেড়াচ্ছে মাংসের পাশ দিয়ে। কসাইখানায় করা হচ্ছে না পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষারও। চর্তুদিকে পোকায় কিলবিল করছে, তার মধ্যে জবাই করা হয় পশু এবং সেখানে বসেই প্রস্তুত করা হয় বাজারজাতকৃত মাংস।
জানা যায়, এখানে প্রায় ৬০ জন কসাই বা মাংস ব্যবসায়ী রয়েছে, মোংলা বন্দরনগরী হওয়ায় সপ্তাহের ৪দিন জবাই হয় পশু। প্রতিদিন ৫০-৬০টি গরু-মহিষ, ২০/২৫টি ছাগল ও ভেড়ার মাংস প্রস্তুত করে বাজারজাত করার জন্য। এতে গরু ১০০,মহিষ ২০০ ও ছাগল প্রতি ৫০ টাকা করে দিতে হয় পৌরসভাকে। এছাড়া মাংস ব্যবসায়ীদের প্রতি বছর ট্রেড ও স্যানেটারী লাইসেন্স করতে হয় মোটা অংকের টাকা দিয়ে। পৌর কর্তৃপক্ষ সরকারী ভাবে নির্ধারিত টাকা নিলেও ফিরেও তাকায় না কসাইখানার দিকে। এছাড়া কসাইখানাটিতে পর্যাপ্ত জায়গার সংকট, চারপাশে দুর্গন্ধযুক্ত আবর্জনার স্তুপ, নেই পানির ব্যবস্থা, কুকুর আর কাকের উপদ্রব, খোলা জায়গায় রোদ-বৃষ্টিতে কসাইদের দুর্ভোগতো লেগেই আছে। এতো কিছু দিয়েও পৌর সেবা থেকে বঞ্চিত এসকল ব্যবসায়ীরা। কসাইদের কষ্টের কথা একাধিকবার জানানোর পরও কিছুই করেননি পৌর কর্তৃপক্ষ এমনটাই দাবি করেছেন মাংস ব্যবসায়ীরা।
মোংলা মাংস ব্যবসায়ী সমিতি সভাপতি মো.নজরুল ইসলাম বলেন, মোংলার মাংস ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগের শেষ নেই, যেখানে মাংস রেখে বিক্রি করা হচ্ছে সেখানেও স্থায়ী কোন দোকান নেই। বন্দর এবং পৌর কর্তৃপক্ষকে বার বার আবেদন করেও কোন ফল হয়নি। বন্দরের জায়গায় সেই পুরনো আমলের কসাইখানা সেখানেই জবাই করা হয় পশু। এটি একটি বন্দর নগরী, এখানে দেশ-বিদেশী নাবিক, পর্যটকদের আনাগোনা রয়েছে। আমাদের কসাইখানার পরিবেশ যদি কেউ নিজ চোখে দেখে জীবনেও আর মাংস খেতে চাইবে না। আমরা সরকার সহ পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে একটি ভাল মানের কসাইখানা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থার দাবি জানাই।
মোংলা পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার সুমী জানান, কসাইখানার বেহাল অবস্থা দেখে নতুন ঘর নির্মাণ, পানি ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যার ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। নতুন ভবন ও পরিবেশ বান্ধব কসাইখানা তৈরীর প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে, প্রকল্পটি শেষ হলে মাংস ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ আর থাকবেনা।
Leave a Reply