মোঃ শাহিন হোসেন:: খালিশপুর বাস্তহারা কলোনীর উত্তর মাথায় বসবাসরত অসহায় জনগোষ্ঠির পূণর্বাসন না করা পর্যন্ত গৃহায়ন ও গণপূর্তের উচ্ছেদ কার্যক্রম স্থগিত রাখার দাবিতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসীরা।
মঙ্গলবার সকালে খুলনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এলাকাবাসীর উদ্যোগে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
এ সময় এলাকাবাসীরা জানান, কেসিসির ৯ নং ওয়ার্ড এর আওতাধীন দীর্ঘ বাস্তহারায় প্রায় ৫২ বছর যাবত বসবাস করছেন তারা। দেশ স্বাধীনের পূর্ব থেকে সহায়-সম্বলহীন, অসহায়, গরীব, ছিন্নমূল, ভূমিহীন মানুষগুলো রেললাইনের পাশে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করতেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৭২ সালে এ সমস্ত গৃহহীন অসহায় মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের লক্ষ্যে স্থায়ী বসবাসের জন্য তৎকালীন সরকার প্রধানের নির্দেশে খুলনা জেলা প্রশাসক খুলনা মহানগরীর (বর্তমান খালিশপুর থানার) অন্তর্গত গোয়ালখালী এলাকার ৩৩ একর জমি অধিগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সলভেশন আর্মি, রেডক্রস, কারিতাস ও কনসার্ন অধিগ্রহণকৃত ভূমিতে মাটি ভরাট, একাধিক ডিপটিউবওয়েল স্থাপন সহ এলাকার রাস্তাঘাট নির্মাণ করে এলাকায় সুপরিকল্পিতভাবে আবাসন ব্যবস্থা করেন। এছাড়া ১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। এলাকার পানীয় জলের অভাব পূরণের জন্য ২টি লেক, ১টি খেলার মাঠ, বাজার ও কবর স্থানের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়। ১৯৭৪ সালে তৎকালীন খুলনা জেলা প্রশাসক ও গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ কর্মকর্তান্বয়ের দ্বৈত স্বাক্ষরে ১৫০২ (এক হাজার পাঁচশত দুই)টি পরিবারের জন্য ১৫০ দ্ধ ৩০ (৪৫০বর্গফুট) আয়তনের প্লট কার্ড প্রদানের কার্যক্রম শুরু করেন। ৭১৪টি পরিবারের মধ্যে কার্ড বিতরণ করা হয়েছিল এবং অপর ৭৮৮ টি পরিবারের মধ্যে কার্ড বিতরণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন ছিল। ১৯৭৫ সালে সরকার পরিবর্তনের পরবর্তীকালে কার্ড বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে অদ্যবধি বাস্তহারা কলোনীতে বসবাস ১৫০২টি পরিবার করছে এবং ২০০৩ ইং সালে হঠাৎ একদিন খালিশপুর হাউজিং এষ্টেট-এর কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী বাস্তহারার উত্তর মাথার ১৭২টি পরিবার যেখানে বসবাস করে সেখানে গৃহায়ন কতৃপক্ষ (হাউজিং) মালিকানা দাবি করে জায়গা ছেড়ে চলে যাওয়ার নোটিশ প্রদান করে বসবাসকারীদের। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের স্মরণাপন্ন হন বসবাসকারীরা। মামলা চলাকালীন সময়ে সকল রাজনৈতিক সরকার-এর প্রতিনিধি, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রগণ, খুলনা ০৩ আসনের বি.এন.পি ও আওয়ামীলীগ উভয় সংসদ সদস্য তাদের কর্মকালে বসবাসকারীদের স্থায়ী বরাদ্দের জন্য সরকার, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসক সকলের সাথে একাধিক বার আলাপ আলোচনা করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধি সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যেহেতু ১৭২টি পরিবারের বসবাসের জায়গাটি হাউজিং এষ্টেট ইতোমধ্যে বিক্রি করে দিয়েছে তাই এই ১৭২টি পরিবারকে বাস্তুহারা দক্ষিণ মাথায় হাউজিং এস্টেটের অবিক্রিত সরকারি খাস জমিতে পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেবার শর্তে বাস্তুহারা এলাকাবাসী সকলেই মেনে নেন। পরবর্তীতে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন ও খালিশপুর হাউজিং এষ্টেট এর যৌথ সার্ভে টিম একাধিকবার ঐ এলাকায় জরিপ করেন এবং তাঁদেরকে পূনর্বাসন ও স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবাসন ব্যবস্থার বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে ভূমি পরিমাপ সম্পন্ন করে জমি ভরাট ও রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনা শুরু করেন। তাদের আশ্বাস ভিত্তিতে পুনর্ভাসিত হওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকেন এসব পরিবার গুলো ।
গত ০৮/১২/২০১৪ইং তারিখে খালিশপুর হাউজিং এষ্টেট-এর কতিপয় ব্যাক্তিবর্গ মাইকিং করে ১১/১২/২০২৪ইং তারিখে (বাস্তুহারার উত্তর মাথায় বসবাসকারী ১৭২টি পরিবারকে উক্ত জায়গা হতে উচ্ছেদের অভিযান পরিচালিত হবে মর্মে ঘোষণা প্রদান করেন।
যে কারণে ভুক্তভোগী বসবাসকারীরা সরকার জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসন ও হাউজিং স্টেট এর প্রতিশ্রুতি মোতাবেক বসবাসকারীদের পুনর্বাসিত না করা পর্যন্ত ১৭২ টি পরিবারের সহস্রাধিক দরিদ্র ছিন্নমূল হতভাগা মানুষের জীবন রক্ষার জন্য আবাসস্থল থেকে উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত করার জন্য কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
Leave a Reply