আজ আর নেই ১৯৭২ সালে আকাশবানি কোলকাতার আধুনিক গান মান্নাদের গাওয়া “কফি হাউজের আড্ডাটা আজ আর নেই ” এই গানটির প্রিয় শ্রতা আমার ভাই কামাল আজ আর নেই। দুই ভাইয়ের বাল্যকালের অনেক স্মৃতিই মনে পড়ছে, তবে সব সময় এই গান বাজলে সে বলত দাদা আমার এই গানটি খুব ভালো লাগে, স্টেশনটা বদলাইনা।
আমরা দুই ভাউ ড্রইংরুমের পাশের রুমে এস এস সি পাশ করা পর্জন্ত থাকতাম, ওছিল একটু ভিতু কখনও আমাকে জড়িয়ে ধরে হাতপা উঠিয়ে দিয়ে ঘুমোত!
সে ছিল আমার চাইতে ইঞ্চিখানেক লম্বা এবং স্মার্ট। আমরা তিন ভাই আমি, কামাল ও আসলাম (মিঠু) দক্ষিণ জার্সির বাসিন্দা মোটামুটি ৫’৬” উচ্চতা সম্পন্ন।
আমি আর মিঠু মায়ের মত মেজাজি আর কামাল ছিল আব্বার মতো ঠান্ডা মস্তিষ্কের।
পাড়ার সুজা রেজা গুন্ডাদের সাথে মেশা একদম নিশেধ ছিল!
আমার কামাল মধুমেহ রোগী আমার মতো কিন্তু সে খাওয়া দাওয়া বেছে খেতনা কিম্বা তার অপদার্থ বেঢকি কালসে স্ত্রী যতœ নেই নি। এই বেটি আমার কামালকে অবহেলা আর অবজ্ঞা শেষ সেকেন্ড পযন্ত। তার ঘরে জন্মেছে তিন আবাল, যারা বাপের গড়া সিলেট থেকে খুলনার ঐ বিশাল হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি রক্ষা করতে পারবেনা। তিনটি আবাল সারাদিন মায়ের সাথে নিউমার্কেট আর বাপের কষ্টার্জিত অর্থ ভেংগে খায়। আমার ভাই আজ আর আমার নেই।
গ্যাংরিন রোগের জন্য কামালের হাটুর নিচ থেকে কেটে ফেলে, তিনটি বছর ধরে নিজের অফিসের একটা রুমে অসহায় জীবন কাটিয়েছে। এই তিনটি বছর অফিসের কর্মচারী সিকান্দার তাকে গোছল করানো থেকে খাওয়া দাওয়া সবকিছুই করেছে। কামালের কমিনা, হারামি স্ত্রী তার প্রাসাদ থেকে নামিয়ে স্থানান্তর করে দেয় কামালের অফিসে। কামাল প্রতিবাদ করতে পারতনা, কারণ সেতো পংগু হয়ে গেছে, তিন আবাল মার অন্যায় মেনেই চলেছে আর ফুচকা খেয়ে বেড়ায়।
কামালের যা সাজা হওয়ার তাতী আল্লাহ রব্বুল ইজ্জাহ তিন বছর ধরে দুনিয়ায় দিয়েছে, আমি আল্লাহ রব্বুল ইজ্জাহর কাছে নামাজ পড়ে এবং যখনই মনে পড়ছে কামালের কথা তার সব গুনাহ মাফ করে দিয়ে তাকে জান্নাতবাসি করেন। এই ভিক্ষাই করছি! আল্লাহ রব্বুল ইজ্জাহর কাছে সারা জীবন যাহা কিছু ভিক্ষা চাহিয়াছি তিনি সব কিছুই ভিক্ষা দিয়েছেন। আমার দৃড় বিশ্বাস আমার কামালের গুনাহ মাফ করে দিয়ে জান্নাতবাসি করবেন!
কামালের অর্থ সম্পদ থাকা সত্ত্বেও তার হারামি স্ত্রী হাস্পাতালের বিল পরিশোধ না করে বাড়ি বসে থাকে। কামালের হাপাতালের সমস্ত বিল আমার ছোট মামা ঢাকা থেকে খুলনা গিয়ে বিল পরিশোধ করে লাশ বাড়িতে নিয়ে যায় ঈষার নামাজের পর জানাজা শেষে কামালকে খুলনা টুটপাড়া কবর স্থানে দাফন করে।
কামাল গতকাল খুলনা নার্গিস হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন, ইন্না-লিল্লাহ—রাজিউন! “আল্লাহুম্মাগফিরলাহু ওয়ারহামহু, ওয়া আফিহি ওয়া ফু আনহু” আমিন। জামাল ইউ আহমেদ, প্রকাশক ও সম্পাদক, দৈনিক বাংলার খবর।
Leave a Reply